সদ্য সমাপ্ত বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের প্রথম কোয়ালিফায়ারে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বিপক্ষে ইনিংসের শেষ দিকে ৯ বলে ৩০ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলতে দেখা গিয়েছিল জেমকন খুলনার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহ ভূমিকা একই। সফল হওয়ার থেকে ব্যর্থই হয়েছেন বেশি। মাহমুদউল্লাহ এই আগ্রাসী ব্যাটিংটাই ধরে রাখতে চাইবেন।
যদিও মাহমুদউল্লাহর এমন ব্যাটিংয়ের ধরন এতো সহজে আসেনি। হুট করে এ ধরণের ভূমিকায় আবতীর্ণ হওয়ার পেছনে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ভিডিও বিশ্লেষক শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের এই ভিডিও বিশ্লেষক মুম্বাই থেকে মাহমুদউল্লাহর ভিডিও বিশ্লেষণ করে জানিয়েছিলেন আসলে সমস্যাটা কোথায়। সে অনুযায়ী অনুশীলন করে সফলও হয়েছেন বাংলাদেশের এই টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।
এ প্রসঙ্গে ইসপিএন ক্রিকইনফোকে মাহমুদউল্লাহ বলেন, 'প্রথম কোয়ালিফায়ারের আগে শ্রীনির সঙ্গে আমার কিছু কথা হয়। পাওয়ার হিটিংয়ের সময় আমার ব্যাটিংয়ে কিছু একটা নেই শুনে বিস্মিত হলাম। ভিডিও দেখেও মনে হলো, কিছু একটা নেই। কিন্তু কী বুঝতে পারলাম না। এরপর চাওয়া মতো শ্রীনি কিছুটা সময় নিয়ে ভিডিওগুলো দেখলেন। তিনি তার মতামত দিলেন। তার সঙ্গে কিছু আলাপ হলো। মনে হলো, আমার কাঁধ দ্রুত উপরে উঠে যাচ্ছে।'
শরীরের দিকে ছুটে আসা শর্ট অফ গুড লেন্থের বল অনেকবার ফ্লিক করে ছক্কা হাঁকাতে দেখা যায় মাহমুদউল্লাহকে। ব্যাটে বলে ঠিকমত সংযোগ ঘটলে এই শটটি সীমানা ছাড়া হলেও মাহমুদউল্লাহকে এই শটেই বারবার আউট হচ্ছিলেন। মাহমুদউল্লাহর ভিডিওগুলো বিশ্লেষন করে চন্দ্রশেখরন এটিই নিয়েই কাজ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁকে। এরপরই সফল হয়েছেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।
এ প্রসঙ্গে চন্দ্রশেখরন বলেন, 'বঙ্গবন্ধু কাপে তামিম, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, ইয়াসির আলী এমনকি বোলারদের দিকে খেলায় রাখছিলাম। তারাও বিভিন্ন সময়ে আমাকে নানান দিক দেখে দেওয়ার জন্য বলেন। আমিও মনোযোগ দিয়ে টুর্নামেন্টটা দেখছিলাম। কারণ আমি নিজেকে এই টুর্নামেন্টের অংশ মনে করি। তো দেখলাম যে, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তার পছন্দের পিক-আপ শটটা (লাইনের বলে করা ফ্লিক) খেলতে পারছেন না। টুর্নামেন্ট জুড়েই তিনি এই সমস্যায় ছিলেন।'
মাহমুদউল্লাহকে পরামর্শ দেয়া প্রসঙ্গে এই অ্যানালিস্ট বলেন, 'আমি টিভিতে একই সঙ্গে নিদাহাস ট্রফির সম্প্রচার এবং মোবাইলে বঙ্গবন্ধু টি-২০ কাপের লাইভ দেখে সমস্যাটা বুঝতে পারি। এরপর রিয়াদের সঙ্গে স্বাভাবিক এক আলাপে তাকে বললাম, যদি কিছু মনে না করেন, আপনার ব্যাটিংয়ের একটা সমস্যার কথা বলতে চাই। আপনি অনেক বেশি পিক-আপ শট মিস করছেন। যা স্লগ ওভারে আপনার শট খেলার বড় শক্তির জায়গা। এরপর তিনি আমাকে আমার পর্যবেক্ষণ জানাতে বললেন।'
চন্দ্রশেখরনের পরামর্শ পেয়ে মাহমুদউল্লাহ জানিয়েছিলেন পরদিন অনুশীলনে তিনি এগুলো নিয়ে কাজ করবেন। এরপরদিন ঠিকই নিজের ভুলগুলো শুধরে নেন মাহমুদউল্লাহ। নেটে এক ঘণ্টা ওই শটের ওপর অনুশীলন করেন। ফিরে পান নিজের আত্মবিশ্বাস। এরপর বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে ৪৮ বলে ৮ চার ও দুই ছক্কায় অপরাজিত ৭০ রান করে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন খুলনার অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। তার এমন পারফরম্যান্সই বোঝা যায় চন্দ্রশেখরনের বিশ্লেষণ বৃথা যায়নি।
এ প্রসঙ্গে চন্দ্রশেখরনের ভাষ্য, 'আমি তাঁর ব্যাটিংয়ের সবগুলো ভিডিও দেখেছি। সে যেখানে যেখানে খেলেছে, যেভাবে খেলেছে সেগুলো বিশ্লেষণ করে তারপর সবগুলো ভিডিওর তুলনা করেছি। ভিডিওগুলোতে তাঁর একটি প্রচলিত প্রবণতা ছিল। তাই আমি কেবল তাকে এই সমস্ত জিনিসগুলো পাঠিয়েছিলাম। এরপর সে আমাকে বলেছিল আগামীকাল অনুশীলনে এগুলো প্রয়োগের চেষ্টা করব।'