My Sports App Download
500 MB Free on Subscription


অবশেষে বাংলাদেশের শারজা জয়

বাংলাদেশের জন্য শারজা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম অপয়া হয়ে উঠেছিল। ১৯৯০ সালে শারজাতে প্রথমবারের মতো ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। অভিষেকে হারের পর আজকের ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দল আরও ৬টি ওয়ানডে ও ৩টি টি-টোয়েন্টি খেলে। যার সবকটিতেই হেরেছে লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। অবশেষে অপয়া ভেন্যু মুখ তুলে তাকিয়েছে বাংলাদেশের দিকে। শনিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে এসে প্রথমবারের মতো শারজাতে জয় পেয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। ঐতিহাসিক ভেন্যুতে স্বস্তির এই জয়ে সিরিজে সমতায় ফিরলো।

শনিবার শারজাতে ৬৮ রানের পাওয়া এই জয়টি বিশেষ কিছু। কেননা এর আগে এই ভেন্যুতে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ভারত ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁচটি ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ। সব ম্যাচে কেবল হারের গল্পই ছিল। এবার আফগানিস্তান সিরিজের আগে প্রত্যাশা ছিল, শারজায় বুঝি হারের বৃত্তটা ভাঙবে। কিন্তু সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে বিধ্বস্ত হতে হয় শান্তর দলকে। ওই হারের পর আজকের ম্যাচ নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা ছিল না। তবে শনিবার প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সংমিশ্রণ ঘটিয়ে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে তুখোড় পারফরম্যান্স করে শারজাতে জয়ের ফুল ফোটালো বাংলাদেশ। এই জয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচটি অলিখিত ফাইনালে রূপ নিয়েছে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ এখন ১-১ সমতা।

ব্যাটিং ব্যর্থতায় চলতি বছর খুব অস্বস্তিকর সময় কাটিয়েছে। বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর পাকিস্তানে গিয়ে কেবল দুটি টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ। বাকি সব ম্যাচেই ছিল হতাশাজনক পারফরম্যান্স। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট, ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি এবং ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটারদের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। ব্যাটারদের এই হতশ্রী পারফরম্যান্সের মঞ্চস্থ হয়েছে শারজাতে আফগানদের বিপক্ষেও। প্রথম ম্যাচে দারুণ শুরুর পরও বড় ব্যবধানে হেরে গেছে। শনিবার দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের সামনে জয়ের বিকল্প ছিল না। সিরিজ বাঁচাতে হলে জিততেই হতো লাল-সবুজ জার্সিধারীদের। শনিবার ব্যাটিং-বোলিংয়ে সেরাটা দিয়ে বাংলাদেশ দল তুলে নিলো ঐতিহাসিক ভেন্যুতে স্বস্তিদায়ক জয়। আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ ২৫২ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায়। জবাবে খেলতে নেমে আফগানরা ১৮৪ রানে অলআউট হয়। তাতেই ৬৮ রানের স্বস্তিকর জয় ধরা দেয় সফরকারীদের হাতের মুঠোয়।

শারজা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। শঙ্কা ছিল আবারও না ব্যাটিং ব্যর্থতায় চরম মূল্য দেয় লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। প্রথম তিন ওভারে ভালোই শুরু করেছিলো বাংলাদেশের দুই ওপেনার। কিন্তু মিড উইকেটে আগের ম্যাচের টপ পারফরমার ডানহাতি স্পিনার মোহাম্মদ গাজানফারকে খেলতে গিয়ে তানজিদ হাসান তামিম (২২) আউট হয়ে ফেরেন সাজঘরে। এরপর সৌম্য সরকার ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে বড় জুটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। আফগান কোন বোলারই পারছিলেন না জুটি ভাঙতে। কিন্তু সৌম্যর দুর্ভাগ্য আম্পায়ার্স কলে রশিদ খানের শিকার হন তিনি। রিভিউ নিলে হয়তো এলবিডব্লিউর হাত থেকে বেঁচে যেতেন! ৭১ রানে জুটি ভাঙার পর এবার মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ৫৩ রানের জুটি গড়েন শান্ত। ৩৩ বলে ২২ রান করে সহ-অধিনায়ক মিরাজ বলের লাইন বুঝতে না পেরে ক্লিন বোল্ড হয়ে ফেরেন সাজঘরে।

বাংলাদেশ যেভাবে ব্যাটিং করছিলেন, তাতে করে একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশ দলের স্কোর ৩০০ ছুঁই ছুঁই হবে। কিন্তু দ্রুত তাওহীদ হৃদয় (১১) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৩) রানে ফেরার পর কঠিন চাপে পড়ে যায় দল। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর দিকে দল তাকিয়ে থাকলেও তিনি পুরোপুরি ব্যর্থ। সর্বশেষ চার ইনিংসে মাহমুদউল্লাহর সর্বোচ্চ রান আজকের ৩! মাহমুদউল্লাহর ব্যর্থতা দলকে বাড়তি চাপে ফেলে দিচ্ছে।

এদিকে অধিনায়ক শান্তও রানের চাকা সচল করতে বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে খেলতে গিয়ে নাঙ্গেলিয়া খারোতেকে উইকেট দেন। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রান আসে শান্তর ব্যাট থেকে। ১১৯ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান দলনেতা। শান্তর আউটের পর দ্রুত আউট হওয়ার শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু অভিষিক্ত জাকের আলি অনিকের ২৭ বলে ৩৭ এবং প্রায় এক বছর পর জাতীয় দলে ফেরা নাসুম আহমেদের ২৪ বলে ২৫ রানের ইনিংসের উপর ভর করে বাংলাদেশ ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫২ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায়।

আফগান বোলারদের মধ্যে নাঙ্গেলিয়া খারোতে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নিয়েছেন। রশিদ খান ও আগের ম্যাচে জয়ের নায়ক মোহাম্মদ গাজানফার দুটি করে উইকেট নেন।

২৫৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে তাসকিন আহমেদের বলে ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ (২) ফেরার পর স্বস্তি ফেরে বাংলাদেশ শিবিরে। তবে স্বস্তি খুব বেশিক্ষণ থাকেনি। দ্বিতীয় উইকেটে ৫২ রানের জুটি গড়ে আফগানিস্তানকে চাপমুক্ত করেন আরেক ওপেনার সেদিকুল্লাহ আতাল ও রহমত শাহ। এক বছর পর ম্যাচ খেলতে নেমে সেই জুটি ভাঙেন নাসুম। দুর্দান্ত ক্যাচে সেদিকুল্লাহকে (৩৯) ফেরান মিরাজ। এরপর তৃতীয় উইকেটে রহমত শাহ ৪৮ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক হাসমতউল্লাহ শহীদির সঙ্গে। ২৯তম ওভারে চাপ হয়ে বসা সেই জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান।

পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে গোল্ডেন ডাক উপহার দিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলেন নাসুম। একই ওভারে গুলবাদিন নাইব-রহমতের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে ফেরেন রহমত। ৭৬ বলে ৫২ রান করে ফিরেছেন তিনি। ৬ বলের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। ওখান থেকে আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি আফগানিস্তান। ৪৩.৩ ওভারে ১৮৩ রানে অলআউট হয় তারা।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে নাসুম ২৮ রানে নেন তিনটি উইকেট। মিরাজ ও মোস্তাফিজ প্রত্যেকে নেন দুটি করে উইকেট। এর বাইরে শরিফুল ও তাসকিন নেন একটি করে উইকেট।