ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের চতুর্থ দিনে পাকিস্তানকে ইনিংস এবং ১৭৬ রানের ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর অবস্থানে পৌছে গেল নিউজিল্যন্ড। সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করার পাশাপাশি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার আশাও বাঁচিয়ে রাখলো কিউরা।
৮ রানে ১ উইকেট হারিয়ে দিন শুরু করা পাকিস্তান, চতুর্থ দিনের শেষ সেশনে এসে নিউজিল্যান্ডের পেসার কাইল জেমিসনের অসাধারণ বোলিং নৈপুণ্যে ১৮৬ রানেই অলআউট হয়ে যায়। মাত্র ৬ টেস্টের ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত ১০ উইকেট শিকার করলেন জেমিসন।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৮ রানে ৬ উইকেটের সঙ্গে প্রথম ইনিংসে ৬৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া ১০ মাস আগে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ঘটা এই পেসার মাত্র ৬ টেস্টে ৩৬ উইকেট শিকার করেছেন। যেখানে তিনি ৫ উইকেট শিকার করেছেন মোট চার বার।
চতুর্থ দিনে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপে প্রথম আঘাত হানেন ট্রেন্ট বোল্ট। নাইটওয়াচম্যান মোহাম্মদ আব্বাসকে ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বিজে ওয়াটলিংয়ের ক্যাচ বানান। কিন্তু এরপর দিনটি পুরোপুরি জেমিসনের হয়ে যায়। তারপরেও আজহার আলি এবং আবিদ আলি কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন।
কিন্তু ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার জেমিসনের বোলিং গোলায় আর বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি এই দুই ব্যাটসম্যান। দলীয় ৪৬ রানের মাথায় ২৬ রান করে ফিরে যান আবিদ। অন্যদিকে ওয়াটলিংয়ের ক্যাচ হয়ে ৩৭ রান করে জেমিসনের শিকার হন আজহার।
আজহার আউট হওয়ার পর পাকিস্তানের আর কোন ব্যাটসম্যান উইকেটে থিতু হতে পারেননি। হারিস সোহেলকে ১৫ রানে আবারো জেমিসন ফেরালে গত ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানো ফাওয়াদ আলমকে ফেরান বোল্ট। জেমিসনের পঞ্চম শিকার হয়ে দলীয় অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান ফিরে গেলে জয়ের আশা ফিঁকে হতে শুরু করে সফরকারীদের।
৬ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ফাহিম আশরাফ করেন ২৮ রান। অন্যদিকে পাকিস্তানের ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান আসে জাফর গোহরের ব্যাট থেকে। বোল্টের বলে আউট হওয়ার আগে জাফর করেন ৩৭ রান। নিউজিল্যান্ডের হয়ে জেমিসন ৬টি, বোল্ট ৩ টি এবং অধিনায়ক উইলিয়ামসন ১টি উইকেট শিকার করেন।
এর ফলে ১৮৬ রানেই ১০ উইকেট হারিয়ে ফেলে পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যন্ডের দেয়া ৬৫৯ রান দুই ইনিংস মিলে টপকাতে না পারলে দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ১৭৬ রানের পরাজয় বরণ করে নিতে হয় রিজওয়ানের দলকে। নিউজিল্যান্ড সিরিজ জয়ের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়াকে পেছনে ফেলে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থান দখল করে নেয়।
একই সঙ্গে আরো বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েছে নিউজিল্যান্ড। এই গ্রীষ্মে চারটি টেস্ট ম্যাচের চারটিতেই জিতেছে তাঁরা। এখনো পর্যন্ত ছয় ম্যাচের একটিতেও কোন দল হারাতে পারেনি তাদের। এছাড়া গত ১৭ টি টেস্ট ম্যাচ ধরে ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য ব্লাক ক্যাপসরা।
পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট জয়ের ফলে ওয়াল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপ পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে উঠে এল নিউজিল্যন্ড। টুর্নামেন্টটির ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে এ বছরের জুনে। চলমান বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির মাধ্যমেই ফাইনালের দুটি দল নির্ধারিত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান (প্রথম ইনিংস) : ২৯৭/১০ (৮৩.৫ ওভার) (আজহার আলী ৯৩,মোহাম্মদ রিজওয়ান ৬১, ফাহিম আশরাফ ৪৮, জাফর গহর ৩৪; কাইল জেমিসন ৫/৬৯, টিম সাউদি ২/৬১)
নিউজিল্যান্ড (প্রথম ইনিংস): ৬৫৯/৬ (১৫৮.৫ ওভা) ( কেন উইলিয়ামসন ২৩৮, হ্যানরি নিকোলস ১৫৭, ড্যারিল মিচেল ১০২*; মোহাম্মদ আব্বাস ২/৯৮, শাহিন আফ্রিদি ২/১০১)
পাকিস্তান (দ্বিতীয় ইনিংস): ১৮৬/১০ (৮১.৪ ওভার) (আজহার আলি ৩৭, জাফর গৌহর ৩৭, ফাহিম আশরাফ ২৮, আবিদ আলী ২৬; কাইল জেমিসন ৬/৪৮, ট্রেন্ট বোল্ট ৩/৪৩)
ফল: নিউজিল্যান্ড ইনিংস ও ১৭৬ রানে জয়ী।