ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা গত রাতের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা কি মোস্তাফিজুর রহমান দেখেছেন? যদি পোর্ট এলিজাবেথে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচটি দেখে থাকেন মোস্তাফিজ, তাহলে সান্ত্বনা পেতে পারেন। কারণ যে বিব্রতকর রেকর্ডটা এত দিন ফিজের ছিল, সেটা এখন হয়ে গেছে ভারতীয় এক ক্রিকেটারের।
পোর্ট এলিজাবেথে গত রাতে বরুণ চক্রবর্তীর ঘূর্ণিতে চোখে রীতিমতো সর্ষেফুল দেখতে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪ ওভার বোলিং করে ১৭ রানে নেন ৫ উইকেট। একটা পর্যায়ে প্রোটিয়াদের যেখানে হারের শঙ্কা জেগেছিল, সেখানে স্বাগতিকেরা ম্যাচ জেতে এক ওভার হাতে রেখে ৩ উইকেটে। বরুণের এই ম্যাচে বোলিংটা কোনো পূর্ণ সদস্যের ক্রিকেটারদের মধ্যে সেরা বোলিং, যেখানে দল হেরেছে। এর আগে ২০১৬ সালে মোস্তাফিজের ৫ উইকেট নেওয়ার ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছিল। তবে সেখানে বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার খরচ করেছিলেন ২২ রান।
১২৫ রানের লক্ষ্যে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ১২.২ ওভারে ৬ উইকেটে ৬৬ রানে পরিণত হয়। এই ৬ উইকেটের ৫টাই নেন বরুণ। এইডেন মার্করাম, রিজা হেনড্রিকস, মার্কো ইয়ানসেন, হেনরিখ ক্লাসেন, ডেভিড মিলার-প্রোটিয়া এই ৫ ব্যাটারকে ফিরিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবার এক ইনিংসে ৫ উইকেটের কীর্তি গড়েন বরুণ। যার মধ্যে ১৩ তম ওভারের প্রথম দুই বলে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছেন হেনরিখ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার। পরবর্তীতে ১৬ তম ওভারের চতুর্থ বলে রবি বিষ্ণুই যখন আদিলে সিমিলানেকে বোল্ড করেন, প্রোটিয়াদের স্কোর হয়ে যায় ১৫.৪ ওভারে ৭ উইকেটে ৮৬ রান। বিপর্যস্ত দক্ষিণ আফ্রিকার হাল ধরেন ত্রিস্তান স্তাবস ও জেরাল্ড কোয়েটজি। অষ্টম উইকেট জুটিতে তাঁরা (স্তাবস-কোয়েটজি) ২০ বলে ৪২ রানের অবিচ্ছেদ্য জুটি গড়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।
এমন অল্প রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও দক্ষিণ আফ্রিকার যেখানে হাঁটু কেঁপেছে, তাতে বরুণের প্রশংসা করেন ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সূর্যকুমার বলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে ১২৫ রানের লক্ষ্য ডিফেন্ড করতে নেমে ইনিংসে ৫ উইকেট পাওয়া অবিশ্বাস্য। এটার জন্য বরুণ দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছিল।’ ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ৪ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ এখন ২-২ সমতায়। সেঞ্চুরিয়নে পরশু হবে সিরিজের তৃতীয় টি-টোয়েন্টি। শুক্রবার জোহানেসবার্গে সিরিজের শেষ ম্যাচে মুখোমুখি হবে দল দুটি।
উইকেট সংখ্যার মতো আরেকটি দিক থেকে মিলে গেলেন বরুণ ও মোস্তাফিজ। বরুণের ৫ উইকেটের ৪টা বোল্ড, একটা ক্যাচ। ৮ বছর আগে কলকাতার ইডেন গার্ডেনসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মোস্তাফিজও তাঁর স্লোয়ার ও কাটারের ভেলকিতে উইকেটগুলো নিয়েছিলেন এভাবে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে কিউইদের তৎকালীন অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন, হেনরি নিকোলস, মিচেল স্যান্টনার, নাথান ম্যাককালাম-এই চার ব্যাটারকে বোল্ড করেছিলেন মোস্তাফিজ। কিউইদের আরেক ব্যাটার গ্র্যান্ট এলিয়ট ক্যাচ আউট হয়েছিলেন ফিজের বলে। বাংলাদেশের বাঁহাতি পেসারও সেবার ৪ ওভারের পূর্ণ কোটা বোলিং করে ২২ রান খরচ করেছিলেন।
মোস্তাফিজের সঙ্গে বিব্রতকর রেকর্ডে আছেন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথু শর্টও। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ বছরের সেপ্টেম্বরে কার্ডিফে ২২ রানে ৫ উইকেট নেন শর্ট। তাঁর উইকেট নেওয়ার ধরন একটু আলাদা। দুইটা বোল্ড ও তিনটা ক্যাচ আউট হয়েছে শর্টের বলে। তবে অস্ট্রেলিয়ার এই খণ্ডকালীন স্পিনার বোলিং করেন ৩ ওভার।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচ হেরেছে এমন ঘটনায় সেরা বোলিং (পূর্ণ সদস্যের দল)
দল বোলিং প্রতিপক্ষ সাল
বরুণ চক্রবর্তী ভারত ৫/১৭ দক্ষিণ আফ্রিকা ২০২৪
মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ ৫/২২ নিউজিল্যান্ড ২০১৬
ম্যাথু শর্ট অস্ট্রেলিয়া ৫/২২ ইংল্যান্ড ২০২৪