দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ৭ উইকেটে হারের পর দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে এলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে সেদিন ৯৭ রানে আউট হওয়া মিরাজের সংবাদ সম্মেলনে আসাটা অস্বাভাবিক নয়। তবে দল টেস্ট হারলে এর ব্যাখ্যা দিতে সাধারণত অধিনায়কই আসেন। কিন্তু সেদিন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এলেন না, পাঠালেন মিরাজকে। এতে কি একটা বার্তাও মিলল?
বার্তা মিলল কি না, সে উত্তর জানতে আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। তবে একটা টেস্ট সিরিজের মাঝেই খবর ছড়িয়েছে, বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্ব করতে চান না শান্ত। টেস্টে তাঁর বিকল্প হিসেবে যে নাম বেশি উচ্চারিত হচ্ছে—মিরাজ। শান্ত অবশ্য মিরাজেরই অধীনে ২০১৬ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলেছিলেন। তবে শান্তর মধ্যে নেতৃত্বগুণ ভালোভাবেই খুঁজে পেয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। একজন আদর্শ অধিনায়ক হিসেবে গড়ে তুলতে তাঁকে অধিনায়ক করা হয়েছে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট, হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) এমনকি ইমার্জিং টিমেও। শান্তর নেতৃত্বেই ২০১৯ সাফ গেমসে ক্রিকেটে সোনা জিতেছিল বাংলাদেশ।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা না থাকলেও ২০২৩ সালটা স্বপ্নের মতো কেটেছিল শান্তর—আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটার তাঁর চেয়ে বেশি রান করতে পারেনি ওই বছরে। গত বছরে ৪২ ম্যাচে ৫ সেঞ্চুরি, ৯ ফিফটিতে শান্ত করেছিলেন ১,৬৫০ রান। গত বছরের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান অনিয়মিত হয়ে পড়ায় তখনকার বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বোর্ড লম্বা সময়ের জন্য তিন সংস্করণেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হিসেবে বেছে নেয় শান্তকে। অধিনায়কত্ব পেতেই যেন শান্তর ব্যাট হাসতে ভুলে যায়! অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ঘরের মাঠে টেস্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেটে একটা সেঞ্চুরি ছাড়া আর কোনো বড় স্কোর আসেনি তাঁর ব্যাট থেকে। সবশেষ ১৬ ইনিংসে তাঁর একটাই ফিফটি, ৮২ রানের একটা ইনিংস খেলেছিলেন সবশেষ ভারত সফরের চেন্নাই টেস্টে। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসে শান্তর রান ৭ ও ২৩।
শান্তকে ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় শিকার হতে হয়েছে নিষ্ঠুর ট্রলিংয়ের। তাঁর নামের পাশে ব্যঙ্গ করে ‘লর্ড’ শব্দটা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে সে কবেই! দুঃখ করে একবার বলেছিলেন, ‘আমি যেন খেলছি নিজেরই দেশের বিপক্ষে!’ গত বছর ধারাবাহিক ভালো খেলায় ট্রলের মাত্রা কমে এলেও অধিনায়ক হিসেবে ধারাবাহিক ব্যর্থ হওয়ার পর আবারও বিষাক্ত ট্রল শুরু তাঁকে নিয়ে। মিরপুর টেস্টের শেষ দিনে গ্যালারি থেকে দুয়োধ্বনিও শুনতে হয়েছে শান্তকে। ব্যাটে রান নেই, দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারছেন না—যতই মানসিকভাবে শক্ত থাকার চেষ্টা করুন, এ মুহূর্তে চাপে ভেঙে পড়া শান্তর কাছে মনে হচ্ছে, এই দায়িত্বের ভার তিনি আর বইতে পারবেন না। চলমান দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ দিয়েই অধিনায়কত্বের ইতি টানতে চান শান্ত।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ বিদেশে থাকায় এখনই অধিনায়ক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্রিকেট বোর্ড থেকে পরিষ্কার কোনো বার্তা না পাওয়া গেলেও গতকাল বিসিবি পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকার করে নিয়েছেন, শান্ত চাপে নুইয়ে পড়েছেন, ‘অতিরিক্ত চাপেই অধিনায়কত্ব করতে পারছে না শান্ত। আমাদের মতো দেশে অধিনায়ক হওয়া মানে সব সময় চাপে থাকতে হবে, ভালো পারফরম্যান্স হবে না, তাকে নিয়ে আমরা যে পরিমাণ সমালোচনা করি, যেভাবে সমালোচনা করি, তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ভালো না খেলার কারণও হয়তো এটা।’
তবে ক্রিকেট বোর্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শান্তর সঙ্গে বসবে। ফাহিম বললেন, এখনো আলোচনার সুযোগ আছে, ‘বিসিবি আলোচনা করতে চাইবে। কারণ, (নাজমুল হোসেন) শান্ত এত দিন ধরে অধিনায়কত্ব করে আসছে, তাই এটা তো আমাদের সময়ের বিনিয়োগও। আমরা একজনকে তৈরির চেষ্টা করছি। সে যদি হঠাৎ সরে যায়, নতুন একজন কিছুটা অপ্রস্তুত। সেটাতে আমাদের যেতে না চাওয়াটা স্বাভাবিক হবে।’
বিসিবির সভাপতি দেশে ফিরলে চট্টগ্রামে এ সপ্তাহেই বিসিবির নীতিনির্ধারকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা হতে পারে। শান্ত আর অধিনায়কত্ব না করতে চাইলে সভা থেকে আসতে পারে পরের অধিনায়কের নাম। সে ক্ষেত্রে টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে মিরাজের নাম সামনে আসছে। টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়কত্ব করতে পারেন তাসকিন আহমেদ কিংবা তাওহীদ হৃদয়।