৪ জানুয়ারি তারিখটি হয়তো পারভেজ হোসেন ইমনের কাছে একটু অন্যরকম। গত বছর এই দিনে যুব বিশ্বকাপের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার বিমানে উঠেছিলেন এই তরুণ। এক বছর পর এই দিনেই ডাক পেয়েছেন জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে। মাঝের পুরো সময়টা যেন স্বপ্নের মতো কেটেছে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের।
যুব বিশ্বকাপ জেতার পর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) মোহামেডানের হয়ে সুযোগ পেয়েছিলেন ইমন। কিন্তু করোনার কারণে ঘরোয়া ক্রিকেটের এই ফরম্যাটে আর খেলা হয়নি তাঁর। মাঝে ৬-৭ মাসের বিরতি। এই সময়টুকু ঘরে বসেই পার করেন তিনি।
করোনার প্রকোপের মাঝে বাংলাদেশে ক্রিকেট ফিরলে ইমনও সুযোগ পান নিজেকে আরও একবার মেলে ধরার। এইচপি দলের প্রস্তুতি ম্যাচে ১৩ বলে ৪০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন এই ব্যাটসম্যান। যদিও বিসিবি প্রেসিডেন্টস কাপে নিজের সেরাটা খেলতে পারেননি ইমন।
২ ম্যাচে সুযোগ পেয়ে মাত্র ২৯ রান করা এই বাঁহাতি ওপেনার জ্বলে ওঠেন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে। ৯ ম্যাচে ফরচুন বরিশালের হয়ে করেন ২৩৩ রান। ২টি হাফ সেঞ্চুরি ছাড়াও ৪২ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নির্বাচকদের নজরে আসেন তিনি। হয়ে যান টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান।
যদিও ইমনের এমন সাফল্যের পেছনে অবদান আছে এইচপি প্রধান কোচ টবি রেডফোর্ডের। যিনি তাঁর ব্যাটিংয়ের দুর্বলতাগুলো নিয়ে কাজ করেছেন। ইমনকে ইমনের মতো করে তৈরি হতে সাহায্য করেছেন।
এই প্রসঙ্গে ক্রিকফ্রেঞ্জিকে ইমন বলেন, 'আমি যা যা চেয়েছিলাম তাই উনি করাচ্ছিলেন। আমাকে তাই বেশি কিছু পরিবর্তন করতে হয়নি। উনি আমাকে দিয়ে যেটা করানোর চেষ্টা করছিলেন আমি সেটা ভালোভাবেই ধরতে পেরেছিলাম। চেষ্টা করেছি নিজের মধ্যে নিয়ে আসতে। তো এটা আমার জন্য অনেক ভালো হয়েছে। ব্যাটিংয়ের সময় শটস খেলতে গিয়ে আমার মাথা পরে যেত উনি এটা নিয়েই প্রচুর কাজ করেছেন। তারপরও লেগ সাইডের বল গুলো খেলতে একটু সমস্যা হচ্ছিল সেগুলো নিয়েও কাজ করেছেন।'
প্রেসিডেন্টস কাপে ৪২ বলে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর অধিনায়ক তামিম ইকবালের কাছ থেকে ব্যাট উপহার পেয়েছিলেন ইমন। অধিনায়কের কাছ থেকে এমন সারপ্রাইজ পেয়ে আরও বেশী আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন এই তরুণ।
ইমন বলেন, 'এটা আসলে তামিম ভাইয়ের পক্ষ থেকে একটা সারপ্রাইজ ছিল। সেঞ্চুরি করে ড্রেসিং রুমে আসার পর উনি আমাকে ওনার একটা ব্যাট উপহার দেন। বলেন যে এটা নেও, এটা তোমার। এটা আমি আশাই করিনি যে এমন কিছু হবে। উনার মতো ক্রিকেটারের কাছ থেকে একটা ব্যাট পাওয়া অনেক বড় বিষয় আমার জন্য।'
'ওনাকে অনুশীলনের সময় দেখতাম আর বলতাম যদি এমন একটা আমার থাকতো তাহলে খুব ভালো হত। কিন্তু ওইটা হয়েই গেছে। এটা আমাকে আরও অনেক বেশি উৎসাহ যুগিয়েছে। উনি আমার আইডল। ওনার থেকে এমন কিছু পাওয়া সত্যিই বড় কিছু আমার জন্য। যা চেয়েছিলাম তাই পেয়ে গেছি হুট করে।'
এদিকে প্রেসিডেন্টস কাপ শেষে ময়মনসিংহে খেলতে গিয়েছিলেন ইমন। সেখান থেকে ফিরেছেন কয়েকদিন আগেই। প্রস্তত হচ্ছিলেন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে এইচপি আসন্ন সিরিজের জন্য। তবে এর আগেই বড় মঞ্চে সুযোগ পাওয়াটা অপ্রত্যাশিত ছিল তরুণ এই ক্রিকেটারের কাছে। ইমন বলেন, 'আমি তো এইচপি দলের সঙ্গে আয়ারল্যান্ড সিরিজ আছে সেটার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলাম। একেবারেই ভাবনি সুযোগ পেয়ে যাব।'
'পুরোপুরি অপ্রত্যাশিত ছিল আমার জন্য। গতবছর আমরা এই দিনেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিমান ধরেছিলাম। আর আমার জন্য আরও ভালো দিন যে এই দিনেই আমি জাতীয় দলের প্রাথমিক স্কোয়াডে ডাক পেয়েছি। সত্যি খুব ভালো লাগছে।'
প্রাথমিক স্কোয়াডে ডাক পেলেও মূল স্কোয়াডে জায়গা নাও পেতে পারেন ইমন। তবে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সিনিয়রদের সঙ্গে আপাতত ড্রেসিং রুম শেয়ার করতে পারাটাকেই বেশি বড় করে দেখছেন। সাকিব-মুশফিকদের কাছ থেকে যে আরও অনেক কিছু নিতে চান তিনি।
ইমন বলেন, 'অবশ্যই ভালো লাগছে। প্রেসিডেন্টস কাপ বা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে অনেক সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করেছি। তাদের থেকে অনেক কিছু দেখেছি, শিখেছি। তো এখানেও তাদের সঙ্গে থাকব। জানি না কতদূর যেতে পারব কিন্তু চেষ্টা থাকবে যেখানেই খেলি নিজের সেরাটা দিয়ে খেলার।'