আক্ষেপ, হতাশা আর দুঃসহ যন্ত্রণার সঙ্গে লড়াই প্রতিটি দিন। একেকটি দিন যেন বছরের সমান। তবে হাহাকার থেকেও ইতিবাচকতা পাচ্ছেন পল পগবা। কঠিন সময়টা মানুষ হিসেবে আরও পোক্ত করেছে তাকে। অভিজ্ঞতায় আরও সমৃদ্ধ এখন তিনি। আপাতত নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ইউভেন্তুসের হয়ে মাঠে ফেরার অপেক্ষায় ফরাসি এই মিডফিল্ডার। এজন্য প্রয়োজনে পারিশ্রমিক কমাতেও প্রস্তুত বিশ্বকাপজয়ী তারকা।
কিছুদিন আগেও অবশ্য পগবার সামনে কেবলই ছিল হতাশার আঁধার। ডোপিংয়ের দায়ে চার বছরে নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর তার ক্যারিয়ারই ঝুলছিল শঙ্কার সুতোয়। তবে বরাবরই তিনি বলে আসছিলেন, না বুঝে নিষিদ্ধ উপদান গ্রহণ করেছেন তিনি। আপিলের পর এই মাসের শুরুতে তার নিষেধাজ্ঞা কমিয়ে দেড় বছরে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। আগামী মার্চে ফুটবলে ফিরতে পারবেন তিনি।
নিষেধাজ্ঞার আগে শেষ ম্যাচটি তিনি খেলেছেন ইউভেন্তুসের হয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে এম্পোলির বিপক্ষে। ইউভেন্তুসের সঙ্গে তার চুক্তি আছে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত।
নিষেধাজ্ঞায় পড়ার পর সেই চুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা কিছুটা হলেও আছে। ইউভেন্তুসের জার্সিতেই আবার মাঠে ফিরতে চান, ৩১ বছর বয়সী ফুটবলার জানালেন ইতালিয়ান পত্রিকা গাৎজেত্তা দেল্লো স্পোর্তকে।
“২০২৫ সালে আমি স্বাভাবিকতায় ফিরতে প্রস্তুত। আমার স্রেফ একটিই লক্ষ্য, ফুটবল খেলা। বাস্তবতা হলো, আমি এখনও ইউভেন্তুসের ফুটবলার এবং তাদের হয়ে খেলারই প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
“আমার কিছু বলার প্রয়োজন নেই। মাঠই (পারফরম্যান্স) কথা বলবে এবং (কোচ) থিয়াগো মোত্তা নিজের চোখে দেখবেন, সেই দেখা থেকে বিবেচনা করবেন। ইউভেন্তুসের সঙ্গে আবার খেলতে অর্থ ছাড় দিতেও তৈরি আছি। আমি স্রেফ ফিরতে চাই।”
নিষেধাজ্ঞার পর গত এক বছরের বেশি সময় কতটা কঠিন ছিল, সেটিও তুলে ধরলেন ২০১৮ বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলার।
“বছরটা খুব কঠিন ছিল এবং সবচেয়ে বেশি কষ্ট যেটায় লেগেছে, তা হলো প্রতিদিন বাচ্চাদের স্কুলে নেওয়ার সময় স্টেডিয়াম ও কন্তিনাসার (ইউভেন্তুসের অনুশীলন মাঠ) পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ভেতরে যেতে না পারা, ইভেন্তুসের হয়ে খেলতে বা অনুশীলন করতে না পারা।”
নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর একটা সময় পর্যন্ত হতাশায় ডুবে ছিলেন তিনি। অবসর নিয়ে ফেলার ভাবনাও তার ছিল। পরে অবশ্য ভরসা রেখেছেন সময়ের ওপর।
“তখন মনে হয়েছে… ‘কী করব আমি!’ চার বছর সময়… মাথায় অঙ্ক খেলা করতে শুরু করে… চার বছর খেলতে বা অনুশীলন করতে না পারা… কোন ক্লাব আমাকে নেবে? ফিট থাকতে পারব তো? এরকম অনেক কিছুই ভাবনায় আসছিল, অনেক ছবিই ফুটে উঠছিল কল্পনায়।”
“তবে অন্য দিকে, বিশ্বাসটাও ছিল অবশ্যই। ইতিবাচক ছিলাম। জানতাম যে, ভুল করিনি বা জেনেবুঝে কিছু করিনি। সৌভাগ্যবশত সেটিই প্রমাণিত হয়েছে এবং তারা কমিয়েছে (নিষেধাজ্ঞা)।”
দুঃসময়ে অবশ্য তিনি একদম একা হয়ে পড়েননি। সতীর্থদের বেশ কয়েকজনকে পাশে পাওয়ার কথা জানালেন তিনি
“বর্তমান ও সাবেক সতীর্থদের অনেকেই আমার পাশে থেকেছে। (হুয়ান) কুয়াদ্রাদো দু-একদিন পরপরই ফোন করে এবং সবসময় আমাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করে। (পাউলো) দিবালা অনেক ম্যাসেজ পাঠিয়েছে। এছাড়াও (দুসান) ভাহোভিচ, (ওয়েস্টন) ম্যাককেনি, (টিমোথি) উইয়াহ, (ময়েস) কিন… ভাবতেও পারিনি এত জনকে পাশে পাব।”
ডোপিংয়ের দায়ে এই নিষেধাজ্ঞাই শুধু নয়, ক্যারিয়ারে বিতর্কে কম জড়াননি পগবা। চোটাঘাত তো ছিলই, পাশাপাশি ভুল কারণেও খবরের শিরোনাম হয়েছেন তিনি অনেকবার।
তবে এবারের অভিজ্ঞতা তাকে মানুষ হিসেবে আরও সমৃদ্ধ করেছে বলেই দাবি করলেন তিনি। নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে বললেন অন্যদের।
“যখন পেছন ফিরে তাকাই… আমার গোটা জীবনে যা কিছু ঘটে গেছে, শুধু ডোপিংয়ের নিষেধাজ্ঞাই নয়… সবকিছু মিলিয়ে… হ্যাঁ, অবশ্যই বয়স ১০ বছর বেড়ে গেছে আমার, অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে, ঋদ্ধ হয়েছি। বলতে পারি, আরও বেশি প্রাজ্ঞ হয়েছি।”
“অবশ্যই যে শিক্ষাটা পেয়েছি, তা হলো (কোনো উপাদান নেওয়ার আগে) বারবার পরীক্ষা করা ও নিশ্চিত হওয়া। কারণ কিছু হওয়ার আগ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই থাকে। অনেক খেলোয়াড়ের নিজের কোচ, ফিজিও, রাঁধুনি আছে এবং অনেক কিছুই হয়ে যেতে পারে। সবার প্রতি তাই আমার পরামর্শ, সবকিছুই যেন প্রকাশ্য থাকে। দিনশেষে দ্বিতীয়বার পরীক্ষা না করে (উপাদান) গ্রহণ করার দায় নিজের কাঁধেই নেব অবশ্যই।”
ফ্রান্সের হয়ে ৯১টি ম্যাচ খেলা মিডফিল্ডার এখন স্বপ্ন দেখছেন ২০২৬ বিশ্বকাপে দেশের হয়ে মাঠ মাতানোর।
“বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন আছে। দেশম (কোচ) এখনও কাউকে কোনো নিশ্চয়তা দেননি। ব্যাপারটি তাই আমার ওপরই। তিনি আমাকে বলেছেন, পারফরম্যান্স দিয়েই (জাতীয় দলের) দুয়ার খুলতে হবে।”