বাংলাদেশ ক্রিকেট কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে নাজমুল হোসেন শান্তরা। গত কয়েক মাস ধরে কেবল টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিই খেলেছে। এই দুই ফরম্যাটে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল যাচ্ছে তাই। ৮ মাস পর ফিরতে যাচ্ছে ওয়ানডে ক্রিকেটে। চলতি বছরের মার্চে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলা বাংলাদেশ আজ বুধবার বিকাল ৪টায় সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবে।
এই ম্যাচ দিয়ে প্রথম ভেন্যু হিসেবে আন্তর্জাতিক ৩০০তম ম্যাচ আয়োজন করতে যাচ্ছে শারজা। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে টি-স্পোর্টস ও গাজী টেলিভিশন।
টেস্টে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিতে পারলেও তার পর থেকেই লাল-সবুজদের ভরাডুবি। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হেরেছে সবকটি ম্যাচ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ যখন ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামছে, তখন নেই সাকিব আল হাসান-লিটন দাসের মতো তারকারাও। তার ওপর র্যাঙ্কিংয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও আফগানরা কঠিন প্রতিপক্ষ। ২২ গজে চোখে চোখ রেখেই কথা বলে তারা। তবে নিজেদের প্রস্তুতি নিয়ে দারুণ সন্তুষ্ট অধিনায়ক শান্ত। ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘প্রস্তুতি খুব ভালো। গত কয়েক দিন যেমন অনুশীলন হয়েছে আমরা খুশি। আমার মতে, সবাই নিজেদের খুব ভালোভাবে তৈরি করেছে। আপনি যে সিনিয়র ক্রিকেটারদের কথা বললেন, তারা এখানে নেই। তবে যারা নেই, তাদের নিয়ে আমরা চিন্তা করতে পারবো না। যারা আছে শুধু তাদের নিয়ে ভাবতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, এখানে পারফর্ম করার মতো ক্রিকেটার আমাদের দলে আছে। আমার বিশ্বাস, দলের ১৫ জনই এখানে পারফর্ম করতে পারবে।’
আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ দিয়েই বাংলাদেশের আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে। আফগানদের বিপক্ষে তিনটি ওয়ানডের পর বাংলাদেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজে খেলবে আরও তিনটি ওয়ানডে। এই ছয় ওয়ানডে খেলেই আগামী ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানে গড়াবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। শান্ত আফগানিস্তান সিরিজ দিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতির কথা মনে করিয়ে দিলেন, ‘(চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে) আমাদের হাতে এখানে তিনটা ম্যাচ, ওয়েস্ট ইন্ডিজে তিনটা। প্রস্তুতি ঠিক বলবো না। ছয়টা ম্যাচই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ছয়টা ম্যাচই জেতার জন্য খেলবো। এখান থেকে ওই আত্মবিশ্বাসটা নিয়ে যদি যেতে পারি, তাহলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য সহজ হবে। আর কোন কম্বিনেশনে আমরা খেলতে চাই, ওই ধারণাটাও এই ম্যাচগুলো থেকে হয়ে যাবে।’
আফগানিস্তান সিরিজের আগে আবারও আলোচনায় ব্যাটারদের ব্যর্থতা। অধিনায়ক শান্ত অবশ্য সেসব নিয়ে পড়ে থাকতে চাচ্ছেন না। তার বিশ্বাস নতুন সিরিজে, নতুন উদ্যোমে ব্যাটাররা ব্যাটিং করবে, ‘যেটা শেষ হয়ে গেছে, শেষ। আমার মনে হয়, এটা নতুন একটা সিরিজ। চেষ্টা থাকবে আমি প্রতিদিন কীভাবে অবদান রাখতে পারি। লক্ষ্য এটাই থাকবে, ম্যাচের যে পরিস্থিতিতে যেভাবে ব্যাটিং করা দরকার সেভাবে যদি করতে পারি তাহলে আমি খুশি থাকবো।’
এমনিতে পরিসংখ্যানের দিক থেকে আফগান থেকে এগিয়ে বাংলাদেশ। এক দিনের ক্রিকেটে এখনও পর্যন্ত ১৬ বার আফগানিস্তানের মুখোমুখি হয়েছে তারা। যেখানে ১০টিতে জয় বাংলাদেশের, বাকি ছয়টিতে আফগানরা। পরিসংখ্যানে এগিয়ে থাকলেও এই সিরিজ জেতা সহজ হবে না তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। এর মধ্যে নিজেদের সবশেষ সিরিজে ইতিহাস গড়েছিল আফগানিস্তান। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে। এ ছাড়াও ব্যাটিং-বোলিং সব ফরম্যাটেই ভারসাম্য রয়েছে দলটির।
তবে সিরিজ শুরুর আগে দর্শকদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে রাখলেন অধিনায়ক শান্ত, ‘দর্শক তো আমার মনে হয়, শুধু এখানে না, সব জায়গায় গেলেই আমাদের সমর্থন দিতে আসে। এখানেও আমি আশা করবো, গ্যালারিজুড়ে আমাদের সমর্থক থাকবে এবং সমর্থন দেবে। এটা তো অবশ্যই বাড়তি একটা প্রেরণা। কারণ দেশের বাইরে খেলতে এসেছি, এখানেও বাইরে থেকে সমর্থন পাওয়া অনেক বড় একটা ব্যাপার।’
শেষে শান্ত আরও যোগ করলেন, ‘মাঠে আসবেন খেলা দেখতে এবং বাংলাদেশ দলকে অনেক বেশি সাপোর্ট করবেন। এতটুকুই (প্রবাসীদের জন্য বার্তা)।’