ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে তিন বিভাগে দূর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ফাইনালে জেমকন খুলনা। আজ (সোমবার) মাশরাফির বোলিংয়ে মাহমুদউল্লাহর খুলনার কাছে ৪৭ রানে হেরেছে মোহাম্মদ মিঠুনরা। এদিন মাশরাফি টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করেন। ৪ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে নেন ৫ উইকেট। আগে ব্যাট করা খুলনা নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২১০ রান করে। জবাবে ১৯.৪ ওভারে ১৬৩ রানে অলআউট হয় চট্টগ্রাম। আগামী শুক্রবার দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারের জয়ী দলের বিপক্ষে ফাইনাল খেলবে খুলনা।
খুলনার দেওয়া ২১১ রানের জবাবে শুরুটা একদমই ভালো হয়নি চট্টগ্রামের। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলের দুই প্রাণ ভোমরা লিটন-সৌম্য বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। দুইজনই মাশরাফির শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। মাশরাফির প্রথম ওভারে মিডউইকেটে খেলতে গিয়ে শামীমকে ক্যাচ দিয়ে রানের খাতা না খুলেই বিদায় নেন সৌম্য। নিজের দ্বিতীয় ওভারে লিটনকে (২৪) বোল্ড করেন মাশরাফি। তৃতীয় উইকেটে মাহমুদুল ও মিঠুন মিলে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। দুইজনের ৭৩ রানের জুটিতে একশো তোলে চট্টগ্রাম।
মাহমুদুল ২৭ বলে ৩১ রান খেলে মাশরাফির তৃতীয় শিকারে পরিণত হন। আরও ২৫ রান যোগ করে মিঠুন টুর্নামেন্টের প্রথম হাফসেঞ্চুরি করে সাজঘরে ফেরেন। আউট হওয়ার আগে ৩৫ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় নিজের ৫৩ রানের ইনিংসটি সাজান এই উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান। এরপর মোসাদ্দেক ১৪ বলে ১৭ রান করে আউট হয়ে চট্টগ্রামের বিপদ আরও বাড়ান।
টুর্নামেন্টের প্রতিটি ম্যাচেই মিডল অর্ডার ঝড় তোলা শামসুর, আজও ভালো কিছু করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু ১০ বলে ১৮ রান করতেই থামে থামান মাশরাফি। বদলি উইকেট কিপার এনামুলের দূর্দান্ত ক্যাচে নিজের চতুর্থ উইকেট পকেটে পুড়েন সাবেক এই অধিনায়ক। একই ওভারের শেষ বলে মোস্তাফিজকে ফিরিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ৫ উইকেট নেন মাশরাফি। এদিকে শামসুরের আউটের পর খুলনার জয়, সময়ের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। শেষ পর্যন্ত ২ বল বাকি থাকতে সবকটি উইকেট হারিয়ে চট্টগ্রাম ১৬৩ রানে থেমে যায়।
খুলনার বোলারদের মধ্যে মাশরাফি ৩৫ রান খরচায় ৫টি উইকেট নেন। চলতি টুর্নামেন্টে অফিস্পিনার রবিউল ইসলামের পর মাশরাফি ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অসবর নেওয়া ৩৭ বছর বয়সী মাশরাফি বুঝিয়ে দিলেন তিনি এখনো ফুরিয়ে যাননি! এছাড়া আরিফুল হক ২৬ রানে দুটি এবং হাসান মাহমুদ ৩৫ রানে দুটি উইকেট নেন। অন্যদিকে সাকিব ৩২ রান খরচায় একটি উইকেট নেন।
গোটা টুর্নামেন্টে জেমকন খুলনার ব্যাটসম্যানরা হতাশ করলেও ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে জ্বলে উঠলেন তারা। দুর্দান্ত গতিতে ছুটে চলা গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে উঠেছিলেন খুলনার ব্যাটসম্যানরা। যেখানে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়ালেন জহুরুল ইসলাম। ওপেনিংয়ে নেমে ৫১ বলে খেলেছেন তিনি ৮০ রানের ইনিংস। তাতে জেমকন খুলনার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২১০ রান। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে এটাই খুলনার সর্বোচ্চ ইনিংস। আগের সর্বোচ্চ ছিল ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ১৭৩।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনার শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। স্কোরবোর্ডে ৭১ রান যোগ করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ১৬ রান করা জাকির হাসান। এক ম্যাচ দলের বাইরে থাকা ইমরুল কায়েস ফিরে দারুণ কিছু করার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু বড় শটস খেলতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে মাহমুদুল হাসানের তালুবন্দী হন ১২ বলে ২৫ রান করে।
গোটা টুর্নামেন্টে ব্যাটিংয়ে সংগ্রাম করা সাকিব আল হাসান কিছুটা হলেও নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ১৫ বলে খেলে যান ২৮ রানের ঝড়ো ইনিংস। ২ চার ও ২ ছক্কায় দ্রুত রান যোগ করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মোস্তাফিজুর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে।
সাকিবের বিদায়ের আগে তার চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর ছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। শরিফুলের এক ওভারে পরপর তিনটি ছক্কা মেরে শুরু হয় মাহমুদউল্লাহ ঝড়। পরের ওভারে সঞ্জিত সাহাকেও মারের পরপর দুই চার। ডানহাতি স্পিনার সঞ্জিতের তৃতীয় বলে মিডউইকেটের ওপর দিয়ে খেলতে গিয়ে সৌম্য সরকারের তালুবন্দী খুলনা অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ৯ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে করেন ৩০ রান।
যদিও মাহমুদউল্লাহ-সাকিবকেও ছাপিয়ে গেছেন জহুরুল। ওপেনিংয়ে নেমে এই ব্যাটসম্যান খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। শুরুতে তার ঝড়েই মূলত বড় সংগ্রহের ভিত পায় খুলনা। দারুণ ব্যাটিংয়ে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে জহুরুল খেলেছেন ৮০ রানের ঝলমলে ইনিংস। ৫১ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৫ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায়।
এছাড়া শেষ দিকে আরিফুল হকের ৯ বলে ১৫ ও মাশরাফি মুর্তজার এক ছক্কায় ২ বলে ৬* রানে ভর দিয়ে ২১০ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় খুলনা।
চট্টগ্রামের সবচেয়ে সফল বোলার মোস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসার ৩.৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট। নিজের চতুর্থ ওভারে দুটি বিমার মারায় বোলিং থেকে বহিষ্কার হন মোস্তাফিজ। বাঁহাতি এই পেসারের বাকি ২ বল করেন সৌম্য সরকার। এছাড়া সঞ্জিত সাহা ও মোসাদ্দেক হোসেন একটি করে উইকেট নিয়েছেন।