My Sports App Download
500 MB Free on Subscription


বছরের সেরা অর্জন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ট্রফি

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আছে বিচ্ছিন্ন সাফল্য। আছে গৌরবজ্জ্বল সাফল্যের অতীত।১৯৯১ এবং ২০০২ কমনওয়েলথ গেমসে শুটিংয়ে আতিক-নিনি এবং আসিফ এর স্বর্নজয় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনকে তুলেছে উচ্চতায়। 

দক্ষিন এশিয়ার প্রথম দাবাড়ু হিসেবে ১৯৮৬ সালে নিয়াজ মোরশেদের গ্র্যান্ড মাস্টার খেতাবও বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের ভাবমূর্তি করেছে উজ্জ্বল। ২০১০ সালে গুয়াংজুতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের স্বর্নপদক জয় কম গর্বের নয়।২০০১ সালে শ্রীলংকার মাটিতে করা সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানের বিশ্বরেকর্ড আজো অক্ষত আশরাফুলের। টেস্ট-এ হ্যাটট্রিক সহ ৬ উইকেটের পাশে সেঞ্চুরিতেও বিশ্বরেকর্ড আছে সোহাগ গাজীর। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ওম্যান্স এশিয়া কাপে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের ট্রফি জয়ও থাকবে বাংলাদেশের সেরা সাফল্যের তালিকায়। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয় দিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে আগমনী বার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে বৈশ্বিক কোন ইভেন্টে ছিল না বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের কৃতিত্ব। ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি পোচেস্টর্মে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে আকবর আলীর দল উড়িয়েছে পতাকা। বাংলাদেশ যুবারা করেছে বিশ্বজয়।আইসিসি'র কোন ইভেন্টে এই প্রথম বাংলাদেশ জিতেছে শিরোপা। সে কারনেই সাফল্যের মানদন্ডে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেই শুধু নয়, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের এই ট্রফি জয় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে সেরা অর্জন।

২০১৬ সালে ঘরের মাঠে যুব বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিল বাংলাদেশ। শিরোপা জয়ের হট ফেবারিট হয়েও সেবার দূর থেকেই দেখতে হয়েছিল অন্যদের জয়োৎসব। এবার দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠতেই স্বপ্নটা আবার ডানা মেলতে শুরু করে। শেষ চারের লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনাল নিশ্চিত করেই লক্ষ্য ছিল একটাই—শিরোপা।বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন এক প্রজন্ম লক্ষ্যটাকে নিজেদের করে নিয়ে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথাটা জানিয়ে দিল দারুণভাবেই। যুব বিশ্বকাপে ভারতের সাফল্য আকাশছোঁয়া। ৪ বারের চ্যাম্পিয়ন তারা। সেই ভারতকে হারিয়ে পোচেস্টর্মে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো কম গর্বের নয়। মুজিবর্ষে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে এটাই ছিল সেরা অর্জন। লক্ষ্যটা ছিল ফাইনাল পর্যন্ত। তার জন্য বিসিবি'র ছিল সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা। এশিয় অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যাওয়ার বদলা নিতে বিসিবি'র গেম ডেভেলপম্যান্ট কমিটি ছিল অনেক বেশি পরিকল্পিত। শ্রীলংকান কোচ নাভিদ নেওয়াজ, ট্রেনার রিচার্ড স্টয়নিচ দেখিয়েছেন স্বপ্ন।

আকবর আলীর মধ্যে ঠান্ডা মাথায় নেতৃত্বগুন আবিস্কার এবং ম্যাচ ভেন্যু পোচেস্টর্মে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কন্ডিশনিং ক্যাম্পের জন্য বরাদ্দ নিয়ে তার সুফল পেয়েছে বিসিবি। ১৮ জানুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে আইসিসির আতিথ্যের বাইরে এক সপ্তাহ এই ভেন্যুকে ব্যবহার করেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। এই সাতদিনের ক্যাম্প শেষে দু’টি প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে নিজেদের ঝালিয়ে নেয় বাংলাদেশ। ‘সি’ গ্রুপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন করে আকবর-হৃদয়রা। ৯ উইকেটের জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে বাংলাদেশ। স্কটল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয় তুলে কোয়ার্টারফাইনাল নিশ্চিত করে তারা। বৃষ্টির কারনে গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয় বাংলাদেশের। তাই ৩ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে রান রেটে এগিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলদেশ।

শেষ আটে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় বাংলাদেশ। স্বাগতিকদের পাত্তা না দিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে যুবারা। ১০৪ রানের বড় জয় পায় বাংলাদেশ। সেমিতে মাহমুদুল হাসান জয়ের সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয়ে প্রথমবারের মত ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। মাহামুদুল হাসান জয়ের সেঞ্চুরিতে ফাইনালের টিকিট পায় আকবর আলীরা। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের স্নায়ুক্ষয়ী ফাইনালে চারবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে বৃষ্টি আইনে ৩ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ে আকবর আলী-পারভেজ হোসেন ইমন, শরিফুল ইসলামর, তানজীদ হাসান তামিম, রকিবুল হাসানরা উড়িয়েছে বাংলাদেশের পতাকা। 

কী অসাধারণ ধৈর্যের না পরিচয় দিয়েছেন আকবর আলী। ক্যাপ্টেনস নক যাকে বলে সেটিই। রীতিমতো ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আকবর খেলে গেছেন। ৭৭ বলে ৪৩ রান করে তিনি আজ জাতীয় বীর। শেষের দিকে রকিবুলও কম যাননি। ভারতীয় বোলারদের বোলিং-তোপগুলো সামলে তিনি অধিনায়ককে সঙ্গ দিয়ে গেছেন অসাধারণ কৃতিত্বে। দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়েই মাঠ ছেড়েছেন এ দুজন।

দেশের ক্রীড়া ইতিহাসে সেরা অর্জনে উৎফুল্ল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ ট্রফি জয়কে মুজিববর্ষে সেরা উপহার বলেছেন। ট্রফি জয়ী দল দেশে ফিরে পেয়েছে বীরোচিত সম্বর্ধনা। বিমানবন্দরে হাজার হাজার ক্রিকেটপ্রেমী অভিনন্দিত করেছেন। বীর যোদ্ধাদের মিস্টি মুখ করিয়েছেন যুবও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। বীর যুবাদের বরণে হোম অব ক্রিকেট মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম সেজেছে অপরূপ সাজে। মিরপুর স্টেডিয়ামের মাঠে কেক কেটে বীরদের বরণ করে নিয়েছে বিসিবি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের সেরা বিজ্ঞাপন হয়ে শত শত বছর থাকবে আকবর দ্য গ্রেটের কৃতিগাঁথা।