স্বপ্ন পূরণের জন্য দেশান্তরী হওয়ার অনেক বাস্তব গল্প আছে। কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে ক্রিকেট খেলার স্বপ্নের জন্য বাড়ি, গাড়িসহ সব সম্পদ বিক্রি করে দেশান্তরী হওয়ার কথা কোনো দিন শোনা যায়নি। এবার এমনই এক নজির গড়েছেন সদ্য নিউজিল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হওয়া ব্যাটসম্যান ডেভন কনওয়ে।
তাঁর জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়। স্বপ্ন ছিল জাতীয় দলের হয়ে খেলা। সেই লক্ষ্যে ক্রিকেটও শুরু করেছিলেন তিনি। তবে সেখানে নিজেকে স্থায়ী করতে পারেননি। সময়টা ২০১৭ সালের মার্চ, দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আট বছরের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ডাবল সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন তিনি। তাতে অনেকে অবশ্য ভেবেছিলেন এখান থেকে হয়তো নতুন করে শুরু করবেন কনওয়ে।
যদিও বাকি জীবনটা তাঁর গল্পের মতো হয়নি। দীর্ঘ ৮ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কখনও স্থায়ী হতে পারেননি বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। নিজের ব্যাটিং অর্ডার নিয়েও অসন্তুষ্টি ছিল তার। কখনও ওপেন করেছেন, কখনও পাঁচে আবার কখনও খেলেছেন সাত নম্বরে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটে নিজের ভবিষ্যত দেখতে না পেয়ে কোলপাক চুক্তিতে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমানোর কথা ভেবেছিলেন ২৮ বছর বয়সি এই ক্রিকেটার।
যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে তাঁর সবচেয়ে ভালো বন্ধু ম্যালকম নোফল এবং মাইকেল রিপানের পরামর্শে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান এই ক্রিকেটার। সেখানে অবতরণ করে নিজের থাকার জায়গা পেতে খুব অপেক্ষা করতে হয়নি। অবতণের চতুর্থ দিনেই নিজের স্থায়ী জায়গা খুঁজে পেয়েছিলেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকায় খুব বেশি সুবিধা করতে না পারলেও নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে শুরুটা দুর্দান্ত করেছিলেন তিনি।
অভিষেক ম্যাচে ৩০, দ্বিতীয় ম্যাচে অপরাজিত ৭৮ এবং তৃতীয় ম্যাচে অপরাজিত ৫০ রান করেছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। দক্ষিণ আফ্রিকার হতাশ ভুলে নিজেকে নতুন রূপে প্রকাশ করেন তিনি। এরপর অবশ্য পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই ব্যাটসম্যানকে।
নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে অষ্টম ক্রিকেটার হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেছেন। এছাড়া ২০১৯-২০ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ১৮০০ রান করেছেন কনওয়ে। ওয়েলিংটনকে টি-টোয়েন্টি সুপার স্ম্যাশ ও প্লাংকেট শিল্ড ডবল জিতিয়েছেন। এরপরই নিউজিল্যান্ড জাতীয় দলের খেলার স্বপ্নটা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
যদিও সেখানে কিছুটা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের বেঁধে দেয়া নিয়ম। আইসিসির নিয়মের কারণে তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে তিন বছর। আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ মাস নিউজিল্যান্ডে থাকলেই কেবল কিউইদের হয়ে খেলার অনুমতি পাবেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির দেয়া নিয়ম মানায় গেল বছরের আগষ্টে তাকে নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলার অনুমতি দেয় তারা। আর তাতে সম্পর্ক বিছিন্ন হয়ে যায় নিজের জন্ম শহর জোহানসবার্গের সঙ্গে। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার থেকে তৈরি হয় নতুন পরিচয়। যেখানে নিউজিল্যান্ডের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি।
ক্রিকেটে ক্যারিয়ারটা নতুন করে শুরু করতেই জোহানসবার্গের বাড়ি-গাড়ি বিক্রি করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বেশ কিছুদিন আগে বলেছিলেন, 'আমি আমার সম্পদ বেচে দিয়েছি, গাড়িও এবং যা ছিল সব। কারণ আমি আমার সেই অধ্যায়টি শেষ করতে চাইছিলাম এবং নতুন করে শুরু করতে চেয়েছিলাম। আমি যদি এটা করতে না পারতাম এবং এক মৌসুম পরই আমি হতাশ হয়ে যেতাম। আমি ভাবতে শুরু করেছিলাম, আমি ফিরে যাবো কিনা। যদিও আমি আর সেখানে ফিরে যেতে চাইনি।'
নিউজিল্যান্ডের পাড়ি জমানোর তিন বছর পর স্বপ্ন পূরণ হতে শুরু করেছে তার। দলটির হয়ে টেস্ট খেলার স্বপ্ন থাকলেও সেই স্বপ্ন পূরণের শুরুটা হয়েছে টি-টোয়েন্টি দিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজের স্কোয়াডে ডাক পাওয়ার পর খেলেছেন প্রথম টি-টোয়েন্টিতেও।
নিজের অভিষেক ম্যাচে জয়ের দেখা পেয়েছে তাঁর দল। যেখানে অভিষেকেই নিজেকে রাঙিয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ২৯ বলে খেলেছেন ৪১ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। তাতে জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণের শুরুটা যেন আশারূপই হলো। এখন দেখার বিষয় যে জাতীয় দলে নিজেকে কতটা স্থায়ী করতে পারেন।