পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি বাজারের নাম মাউমারি। ওই বাজারে মোস্তাফিজের বোলিং দেখেই পেসার হওয়ার স্বপ্নটা দেখা শুরু শরিফুল ইসলামের। সময়ের ব্যবধানে কেবল পেসারই নন, একটি একটি করে সব ফরম্যাটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হচ্ছে বাঁহাতি এই পেসারের। নিউজিল্যান্ডে কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে অভিষেকের পর শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট ক্রিকেটেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পথচলা শুরু হয় শরিফুলের। কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে অভিষেক হয়ে গেলো বাঁহাতি এই পেসারের। মঙ্গলবার যার বোলিং দেখে পেসার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই মোস্তাফিজের সঙ্গেই আরও একবার বোলিং করার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে পঞ্চগড় থেকে উঠে আসা এই তরুণের।
২০১৫ সালে মোস্তাফিজ যখন মিরপুরে ভারতের বিপক্ষে একের পর এক উইকেট নিয়ে নিস্তব্ধ করে দিচ্ছিলেন প্রতিবেশি দেশের শতকোটি ক্রিকেটপ্রেমীকে, শরিফুলের চোখ তখন ছিলো টেলিভিশনের পর্দায়। মোস্তাফিজের বোলিং-বীরত্ব তার রক্তে তোলে নাচন- 'হতে হবে তার মতো পেসার'। গ্রামে বিদ্যুৎ নেই, টেলিভিশন নেই। মোস্তাফিজের সেই বোলিং-বীরত্ব শরিফুল দেখেছিলেন বাড়ি থেকে ২০ মিনিট দূরের মউমারি বাজারের এক দোকানে।
২০১৬ সালের জেএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারেননি। এই ব্যর্থতাই শরীফুলের জন্য শাপেবর হয়ে আসে। 'লেখাপড়ায় দুর্বল' ভাগ্নেকে দিনাজপুরের এক ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি করে দেন শরিফুলের মামা। সেখানে তার ওপর চোখ পড়ে রাজশাহীর কোচ আলমগীর কবিরের। থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাসহ শরিফুলকে কিছুদিন অনুশীলন করান তিনি। তাতেই নজর কাড়েন শরিফুল। তার জায়গা হয় রাজশাহী ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমিতে। সেখান থেকে সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ ও জহুরুল ইসলামের কল্যাণে শরিফুল চলে আসেন ঢাকায়, খেলেন লিস্ট-এ ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট এবং অব্যাহত রাখেন নজরকাড়া পারফরম্যান্স। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ ও ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করে শরিফুল এখন জাতীয় দলে।
অনেকটা কঠিন পথ পাড়ি দিয়েই জাতীয় দলে সুযোগ করে নিতে হয়েছে পঞ্চগড়ের কৃষক-সন্তান শরিফুলকে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় এরকম পরিবারের সন্তানদের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখা একটু বাড়াবাড়িই। তার পরও স্বপ্নটা দেখেছিলেন দীর্ঘদেহী শরিফুল। পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত এক গ্রাম মউমারি। এই বাজারের এক দোকানে বসে জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নটা হৃদয়ে এঁকেছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে শরিফুলের। মঙ্গলবার প্রথম ওয়ানডের আগে একটি টেস্ট ও তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে বাঁহাতি এই পেসারের।