চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে অভিষেক হয়েছে কাইল মায়ার্সের। নিজের অভিষেক ম্যাচে পাহাড়সম চাপ জয় করে দলকে জয় উপহার দিয়েছেন তিনি। চতুর্থ ইনিংসে জয়ের জন্য ৩৯৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে নিজের অভিষেক ম্যাচেই ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন মায়ার্স। তার অন্যবদ্য এই ডাবল সেঞ্চুরিতে চট্টগ্রাম টেস্ট নিজেদের করে নিয়েছে ক্যারিবীয়রা।
অভিষেক টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করার কীর্তি বিশ্ব ক্রিকেটে বিরল। ক্যারিবীয় এই ব্যাটসম্যান ৬ষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে এমন মাইলফলক স্পর্শ করেছেন। ২০০৩ সালের পর প্রথমবার কোনও ব্যাটসম্যান এই কীর্তি গড়লেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের লরেন্স রোওয়ের পর দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি করলেন তিনি।শনিবার ম্যাচের চতুর্থ দিন শেষ সেশনে ৫৯ রান তুলতে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এখান থেকে অবিশ্বাস্য এক লড়াইয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছেন তিনি, অভিষেক আরেক ব্যাটসম্যান এনক্রুমা বোনারকে সঙ্গে নিয়ে। অভিষিক্ত দুই ব্যাটসম্যান কাইল মায়ার্স ও এনক্রুমা বোনার চতুর্থ উইকেটের ২১৬ রানের জুটিতেই মূলত সফরকারীদের জয়ের পথটা সুগম করে। বোনার ৮৬ রানে সাজঘরে ফিরলেও মায়ার্স উইকেট আকড়ে পড়ে থাকেন। স্পিনবান্ধব উইকেটে অন্য ব্যাটসম্যানরা যেখানে অতিরিক্ত সাবধানতা থেকে বাজে বলও সমীহ করে খেলেছেন, মায়ার্সের সেখানে হাত খুলেই খেলেছেন! তাতে তিনিও সফলও হয়েছে। যদিও ভাগ্যদেবী তার সঙ্গী ছিল।
মায়ার্স-বোনারের বড় জুটিতে কৃতিত্ব বাংলাদেশি ফিল্ডারদেরই। দুইবার জীবন পেয়েছেন মায়ার্স। ৪৯ রানে স্লিপে দেওয়া তার ক্যাচ মিস করেন শান্ত। এরপর এলবিডব্লিউতে আউট হলেও রিভিউ নেননি মুমিনুল। একই ভুল হয়েছে বোনারের বেলাতেও, তার বেলায়ও রিভিউ নেননি বাংলাদেশ অধিনায়ক। পরে রিপ্লেতে দেখা গেছে, লেগস্ট্যাম্প উপড়ে ফেলত বলটি। এতোকিছুর পরও এই দুই ব্যাটসম্যান নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সংকল্পবদ্ধ ছিলেন।শনিবার চতুর্থ দিন শেষে ৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন মায়ার্স। আজও শুরু থেকে বাংলাদেশের বোলিং লাইনআপকে এলোমেলো করে দিয়েছেন অভিষিক্ত ক্যারিবীয় এই ব্যাটসম্যান। দিনের প্রথম ঘণ্টায় তুলে নেন ফিফটি। ৮৯ বলে ফিফটি পেয়েছিলেন। তিন অঙ্কে যেতে খেলেন আরও ৮৯ বল।
মোস্তাফিজের বলে স্লিপ কর্ডনের ওপর দিয়ে বল সীমানার বাইরে পাঠিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করা মায়ার্সকে পুরো ইনিংসেই থামানো যায়নি। দলকে জয়ের বন্দরে ভিড়িয়ে নিজে অপরাজিত থাকেন ২১০ রানে। তার এমন ইনিংসের পর চট্টগ্রামে রচিত হলো মায়ার্স কাব্য। নাঈম হাসানের বল অফ সাইডে ঠেলে ১ রান নিয়ে বিশ্বের ৬ষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলেন তিনি। সবমিলিয়ে প্রায় চার সেশন ব্যাটিং করেছেন ৩১০ বল মোকাবেলা করেছেন অভিষিক্ত এই ব্যাটসম্যান। ২০ চার ও ৭ ছক্কায় মায়ার্স তার ২১০ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন।মায়ার্সের আগে অভিষেকে পাঁচ ব্যাটসম্যান ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। কারোই নেই চতুর্থ ইনিংসে। মায়ার্স এই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন। শেষবার বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন জ্যাক রুডলফ। ২০০৩ সালে চট্টগ্রামেই ২২২ রান করেছিলেন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান। এর আগে অভিষেকে ডাবলের স্বাদ পেয়েছেন টিপ ফস্টার (২৮৭), লরেন্স রোয়ে (২১৪), ম্যাথু সিনক্লেয়ার (২১৪) ও ব্রেন্ডন কুরুপ্পু (২০১)।