নিউজিল্যান্ডের কাছে হারের পর পোস্ট ম্যাচ প্রেজেন্টেশনে এসে বাংলাদেশ দলপতি তামিম ইকবাল উপস্থাপিকার সঙ্গে হেসে কথা বলছিলেন ঠিকই কিন্তু তার অবয়বে খেলে যাচ্ছিল নিদারুণ হতাশা, লেপ্টে ছিল চাপা এক কষ্টের গোঙানি। যেন কেউ তার ক্রিকেটীয় সত্তায় ছুড়ি চালিয়ে দিয়েছে আর সেখান থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত ছুটছে!
কেনই বা এমন হবে না বলুন? ক্রাইস্টচার্চের এই মাঠে (হ্যাগলি ওভাল) ২৬০ রানের বেশি তাড়া করে জয়ের রেকর্ড কারোরই নেই। সেখানে বাংলাদেশ করেছে ২৭১ রান। কিন্তু তারপরেও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা হল না তামিম ইকবালদের! পেছনে কারণ একটিই, ক্যাচ মিসের মহড়া! তাতে মূল্যও দিতে হল বেশ চওড়া। সম্ভাবনা জাগিয়েও এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ হেরে গেল টিম টাইগার্স। ফলে হতাশায় মুহ্যমান বাংলাদেশ অধিনায়ক।মঙ্গলবার (২৩ মার্চ) হ্যাগলি ওভালের মন্থর উইকেটে ২৭২ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা কিউইদের ৫৩ রানেই ৩ উইকেট ফেলে দিয়ে শুরুতেই জয়ের আশা জাগায় ডমিঙ্গো শিষ্যরা। কিন্তু অধিনায়ক টম ল্যাথাম ও ডেভন কনওয়ের ১১৩ রানের জুটিতে সেই সম্ভাবনা ক্রমেই মিইয়ে যেতে শুরু করে। অমনি দুর্দান্ত থ্রো তে ডেভন কনওয়েকে ৭২ রানে ক্রিজ ছাড়া করে আবার দলকে ম্যাচে ফেরান তামিম। কিন্তু মুশফিকুর রহিম ও শেখ মেহেদির ক্যাচ মিসের মহড়ায় জয় দূরের বাতিঘরই থেকে যায়।
জিমি নিশামের ব্যাটে চুমু খেলে বল চলে যায় উইকেটের পেছনে। ক্যাচটি সহজই ছিল কিন্তু তা গ্লাভসে জমাতে পারেননি মুশি। পরের দৃশ্যপটে, টম ল্যাথামের মিসটাইমিংয়ে আসা সহজ ক্যাচটিও তালুবন্দি করতে ব্যর্থ হন বোলার শেখ মেহেদি নিজেই। সেই ল্যাথামই অপরাজিত ১১০ রানের ইনিংস খেলে দক্ষ নাবিকের মত দলকে জয়ের বন্দরে ভেড়ান। সঙ্গত কারণেই তামিমের এই হতাশা।আমাদের ম্যাচটি জেতা উচিত ছিল। বোলাররা সুযোগ তৈরী করেছিল কিন্তু আমরা তা নিতে পারিনি। আমরা খুব কম ম্যাচই জিতি। কিন্তু এই ধরণের পরিস্থিতিতে ক্যাচ মিস হতাশাজনক। আমাদের নিশ্চিত করা উচিত ছিল যেন শতভাগ দিতে পারি। ফলে অবশ্যই হতাশ। ব্যাটসম্যানরা ভালো ব্যাটিং করেছে। আমার মনে হয় ২৭১ একটি ভালো সংগ্রহ। বোলাররাও ভালো শুরু করেছিল। আমরা উইকেট পাচ্ছিলাম। কিন্তু যখন সুযোগ এলো আমরা নিতে পারিনি।’
বাংলাদেশের সিরিজে ফেরার এই ম্যাচে তামিম ইকবাল ৭২.২২ স্ট্রাইক রেটে ১০৮ বল খেলে তামিম কিবাল করেছেন ৭৮ রান। আর ১২৮.০৭ স্ট্রাইক রেটে ৫৭ বল খেলে মোহাম্মদ মিঠুন অপরাজিত থেকেছেন ৭৩ রানে। সতীর্থের এমন ব্যাটিংয়ের দেখে তাকে প্রশংসার বানীতে ভাষাতে কার্পণ্য দেখাননি তামিম, মিঠুন অসাধরণ ব্যাটিং করেছে। মুশিও ভাল করেছে। প্রথম ম্যাচের তুলনায় এই ম্যাচে আমরা অনেক উন্নতি করেছি কিন্তু আমরা এখানে উন্নতি করতে পারিনি জিততে এসেছি সেই সুযোগও আমাদের ছিল। দেখেন ক্যাচ মিস হয়, আমি সেটা বুঝি কেননা এটা ক্রিকেট খেলা। কিন্তু কখনো এটা খুব্ই বেদনাদায়ক। আমি আবার বলছি আমাদের সুযোগ ছিল। আমরা যদি ওই সুযোগ দুটি নিতে পারতাম ম্যাচটি আমাদের ছিল। তবুও আমি অভিযোগ করছি না কারণ ইচ্ছে করে কেউই ক্যাচ মিস করে না।’তামিম ইকবালের ৭৮ ও মোহাম্মদ মিঠুনের ওয়ানডে সেরা ৭৩ রানের ঝড়ো ব্যাটে ২৭১ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পায় বাংলাদেশকে। যা ব্ল্যাকক্যাপসরা ছুঁয়ে ফেলে ১০ বল বাকি রেখে ৫ উইকেটের খরচায়।