২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেন অস্ট্রেলিয়ার তুরুপের তাস লেগস্পিনার শেন ওয়ার্ন। ওয়ার্নের অভাব কিছুদিন মিটিয়েছেন তাঁরই ছায়ায় ঢাকা পড়ে যাওয়া আরেক লেগস্পিনার স্টুয়ার্ট ম্যাকগিল। তবে তিনিও যখন ব্যাট-প্যাড তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন নির্বাচকরা পাগলের মতো খুঁজতে শুরু করলেন নতুন কাউকে।
সেটার জন্য অবশ্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সেই সময়ের নির্বাচকদের। ওয়ার্ন না হলেও তাঁর অ্যাকশনের কাছাকাছি স্টিভেন স্মিথকে খুঁজে বের করেন তারা। ওই সময়ের তরুণ স্মিথকে দেখে আশায় বুকে বেঁধেছিলেন অস্ট্রেলিয়ানরা। তাকে দেখে তো সে সময় স্বয় ওয়ার্ন বলেছিলেন, সে আমাদের জন্য বিশেষ কিছু হতে পারে।
তিনিও হয়েছেনও বটে। তবে নতুন ওয়ার্ন নয়, হয়েছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। সময়টা ২০১০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে একদিনের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে লেগ স্পিনার হিসেবে অভিষেক হয় স্মিথের। অভিষেকে আহামরি কিছু করতে না পারলেও বোলিংয়ে দুই উইকেট নিয়েছিলেন।
২০১১-১২ অ্যাশেজে ব্যাটসম্যান হিসেবে ছয় নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেননি। তাতে দল থেকে জায়গা হারাতেও সময় লাগেনি। এরপর ২০১২-১৩ মৌসুমে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ভাগ্যগুণে কপাল খুলে স্মিথের। সুযোগ পেয়েই ৯২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
এরপর থেকে ধীরে ধীরে লেগস্পিনার থেকে মনোযোগী হয়ে উঠেন ব্যাটিংয়ে। একটা সময় তো ব্যাটিংয়ে অত্যাধিক মনাযোগ দিতে বল করা একেবারেই ছেড়ে দেন। এরপর নিজের পরিশ্রম, চেষ্টা এবং দক্ষতার কল্যাণে হয়ে উঠলেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। শুধু তাই নয় বর্তমানে আইসিসি তালিকায় জায়গা করে আছেন বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে।
ভারতের বিপক্ষে শুরু হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। গোলাপি বলের টেস্ট দিয়ে সিরিজ শুরুর আগে এক আড্ডায় মেতেছিলেন স্মিথ এবং ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলি। লেগস্পিন করার সময়টার কথা বেশ ভালোভাবেই মনে আছে কোহলির। যে কারণে প্রশ্নে ছুঁড়ে দিলেন স্মিথকে।
অ্যাকাডেমিতে তোমার লেগস্পিন অ্যাকশনের কথা আমার মনে আছে। সবাই বলাবলি করছিল এই ছেলেটা নতুন শেন ওয়ার্ন। ১০ বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে তোমার গড় ৬০। কোহলি এই কথা বলা শেষ করতে না করতেই স্মিথ বলে উঠলেন, ‘আমি নিজেকে সবসময় একজন ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখি। যখন ছোট বেলা থেকে আমি বড় হয়েছি তখনও ব্যাটিং করতাম। তবে বোলিংও করতাম। আমি যতটা সম্ভব খেলার মাঝে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকতে চেয়েছি।’
শুরুর দিকে বেশ খানিকটা জোরে বল করতেন তিনি। পরবর্তীতে তাঁর বয়স যখন ১৪ কিংবা ১৫ তখন লেগস্পিন করা শুরু করেন। মানুষ তাকে নতুন শেন ওয়ার্ন বললেও তিনি এটি বিশ্বাস করতেন না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে আমি জোরে বল করতাম। যখন আমার বয়স ১৪-১৫ তখন স্পিন বোলিং শুরু করেছিলাম। লোকেরা আমাকে নতুন শেন ওয়ার্ন ভাবতো কিন্তু আমি কখনই এটি বিশ্বাস করতাম না। আমি এটি পছন্দ করি কিন্তু লেগস্পিনে অনেক কাজ করতে হয়। আমি একই সঙ্গে ব্যাটিংটা হারাতে চাইনি।’
অস্ট্রেলিয়ার দলে নিয়মিত জায়গা পেতে এবং সফল ক্যারিয়ার গড়তেই লেগস্পিন ছেড়েছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে এই সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল না এবং এটি নিয়ে তিনি খুশি বলেও জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে স্মিথ বলেন, ‘২০১২ সালের কথা যখন আমি বাদ পড়েছিলাম। তখন আমি ভেবেছিলাম সফল ক্যারিয়ার গড়তে এবং অস্ট্রেলিয়া দলে ফিরে আসতে আমার সবচেয়ে ভালো উপায় কি? পরে বুঝতে পারি যে লেগস্পিন ছাড়ার সময় এসেছে। এটি বড় একটি সিদ্ধান্ত ছিল কিন্তু আমি এখন খুশি।’