বয়সভিত্তিক ক্রিকেট পেরিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচকদের নজরে পড়ে যান নাজমুল হোসেন। বিস্তর প্রতিভাবান বলেই জাতীয় দলের আশপাশে সব সময় ছিলেন তিনি। গত কয়েক বছর কখনো জাতীয় দল, কখনো হাইপারফরম্যান্স, কখনো বা ‘এ’ দলের হয়ে খেলিয়ে নাজমুলকে তৈরি হওয়ার মঞ্চটা দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেটর নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবুও প্রতিদান দিতে পারছিলেন না নাজমুল। অবশেষে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১ ইনিংস পর টেস্ট সেঞ্চুরি পেলেন, এই সেঞ্চুরিতে কিছুটা হলেও প্রতিদান দেওয়ার সুযোগ পেলেন বাঁহাতি টপ অর্ডার এই ব্যাটসম্যান।
২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিন নম্বর ব্যাটিং পজিশনে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছিলেন সাকিব আল হাসান। তবুও ভবিষ্যত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সাকিবের পরিবর্তে গত ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নাজমুলকে তিন নম্বরে খেলায় টিম ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। অবশেষে বুধবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যান্ডিতে প্রথম টেস্টে তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমেই করলেন বাজিমাত। ১১ ইনিংস পর নাজমুল পেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি।
বুধবার শুরুতে নাজমুলকে কিছুটা অস্বস্তিতে দেখা গেলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন নাজমুল। ইনিংসের ৩৭তম ওভারে বিশ্ব ফার্নান্দোর একটি বল থার্ডম্যান বাউন্ডারি মেরে হাফসেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছান নাজমুল। সবমিলিয়ে ১২০ বলে নাজমুল ৫০ রানের মাইফলকে পৌঁছান। দ্বিতীয় ৫০ রান করতে আরও ১১৫ বল খেলেছেন। সবিমিরিয়ে ২৩৫ বলে ১২ চার ও ১ ছক্কায় নাজমুল ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটি পূর্ণ করেন।
দ্বিতীয় উইকেটে তামিমের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ১৪৪ রানে জুটি গড়ে দলকে শক্ত ভীত গড়তে সাহায্য করেন নাজমুল। তামিম ৯০ রানে ফিরে যাওয়ার পর নতুন ক্রিজে নামা মুমিনুলকে দূর্দান্ত সাপোর্ট করেছেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির পথে মুমিনুলের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ১০২ রানের জুটি গড়েছেন তারা। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের স্কোর দুই উইকেট হারিয়ে ২৫৪।২০১৭ সালে হুট করেই টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় নাজমুলের। ওই বছর নিউজিল্যান্ড গিয়েছিলেন ডেভল্যাপমেন্ট প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে। ওখানে তার কোনও ম্যাচই খেলার কথা ছিল না। কিন্তু মমিনুলের ইনজুরি শেষ পর্যন্ত ভাগ্য খুলে দেয় তার। অভিষেক টেস্টে ১৮ ও ১২ রান করলেও তাকে নিয়ে হতাশ ছিলেন না নির্বাচকরা!
২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়ে সেটাও কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। এরপর ২০২০ সালে পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলার সুযোগ হয়। পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো কিছুই ইঙ্গিত দিয়েও বড় ইনিংস খেলতে পারেনি তিনি। তবে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরির দেখা মিলে নাজমুলের। খেলেন ৭১ রানের ঝকঝকে একটি ইনিংস। চলতি বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি টেস্টে ফের ব্যর্থ হন নাজমুল। তবুও নির্বাচকরা নাজমুলের উপর আস্থা হারায়নি।
ক্লেমন ক্রিকেট একাডেমি থেকে ক্রিকেট দীক্ষা শুরু করা নাজমুল ওখান থেকেই খেলেন অনূর্ধ্ব-১৪ জেলা ক্রিকেট। জেলার হয়ে খেলা শেষ করে সুযোগ পান বিভাগীয় দলে। ধারাবাহিকতায় অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় দলে ডাক পান এই ওপেনার কাম অফস্পিনার। ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৭ দলের ক্যাম্পেও। সেখান থেকে কোনও ম্যাচ না খেলেই প্রমোশন হয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। নাজমুল অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডটি তার দখলে। এজন্য অবশ্য অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৫৮টি ম্যাচও খেলতে হয়েছে।