চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম মানেই যেন মুমিনুল হকের ব্যাটে রানের ফোয়ারা। পয়মন্ত এই ভেন্যুতে শনিবার নিজের দশম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক। এই সেঞ্চুরিতে মুমিনুল ছাড়িয়ে গেছেন বাংলাদেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবালকে। এতোদিন সবচেয়ে বেশি ৯ সেঞ্চুরির মালিক ছিলেন তামিম। শনিবার চট্টগ্রামে আরেকটি সেঞ্চুরি করে তামিমকে ছাড়িয়ে গেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মুমিনুলের ব্যাট। তার ব্যাটে চড়ে বাংলাদেশের লিডও ছাড়িয়ে গেছে সাড়ে তিনশো।
আগের দিনে ৩০ রানে অপরাজিত থেকে মাঠে নামেন মুমিনুল। লাঞ্চ বিরতিতে যাওয়ার ঘন্টাখানেক আগে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৪তম হাফসেঞ্চুরি। ব্যক্তিগত ৮৩ রান নিয়ে লাঞ্চ বিরতিতে যান মুমিনুল। বিরতি থেকে ফিরে তুলে নেন ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। কর্নওয়েলের বলটি কভারের দিকে ঠেলে সিঙ্গেল নিয়ে মুমিনুল তুলে নেন ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি। ১৭৩ বলে মুমিনুল খেলে ৯টি বাউন্ডারি সাহায্যেসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন।
শুক্রবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার রাকিম কর্নওয়েলের বলে ১ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ব্যাট করতে মাঠে নামেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। ঠান্ডা মাথার এই ব্যাটসম্যান উইন্ডিজ বোলারদের দেখেশুনে খেলেন। ক্যারিবীয় পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বাউন্সার এবং কেমার রোচের বৈচিত্র্যময় বোলিংও কাবু করতে পারেনি মুমিনুলকে। দুই প্রান্তে দুই স্পিনাররা বিপদে ফেলতে পারেনি বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ককে। সবমিলিয়ে প্রতিপক্ষের সব কৌশলকে ব্যর্থ করে দিয়ে মুমিনুল তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি। যা নির্দিষ্ট কোন ভেন্যুতে বাংলাদেশি কোন ব্যাটসম্যানদের পক্ষে একটি রেকর্ড। একটি নির্দিষ্ট ভেন্যুতে মাহেলা জয়াবর্ধনের সবচেয়ে বেশি ১১ টি সেঞ্চুরির রেকর্ড আছে। তিনি সিংহলজি স্পোটস ক্লাব মাঠে এই কীর্তি গড়েছিলেন।
টেস্ট ক্যারিয়ারে মুমিনুলের সেঞ্চুরির সংখ্যা দশটি। যার মধ্যে চট্টগ্রামেই করেছেন সাতটি সেঞ্চুরি, বাকি তিনটি ঢাকাতে। ২০১৩ সালে মুমিনুলের ক্যারিয়রের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের পয়মন্ত ভেন্যুতে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১৮১ রানের ইনিংস। ওটাই এখন পর্যন্ত মুমিনুলের ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস।
ওই বছরের ২১ অক্টোবর ঢাকায় নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান মুমিনুল। ২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজের পয়মন্ত ভেন্যুতে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। একই বছরের নভেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চট্টগ্রামের মাটিতে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরির দেখা পান মুমিনুল। খেলেন অপরাজিত ১৩১ রানের ইনিংস। টানা কয়েক ইনিংস ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ইনিংসেই চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি করেন বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক। প্রথম ইনিংসে ১৭৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেন ১০৫ রানের ইনিংস। টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করে কিংবদন্তি ক্রিকেটার কুমারা সাঙ্গাকারা, ব্রায়ান লারা, সুনীল গাভাস্কারদের ছুঁয়ে ফেলেন মুমিনুল হক। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র মুমিনুলের এই কীর্তি থাকলেও বিশ্ব ক্রিকেটে এটি অহরহই আছে।
এরপর ২০১৮ সালের নভেম্বরে ক্যারিবীয়ানদের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান মুমিনুল। খেলেন ১২০ রানের ইনিংস। দুই বছরের ব্যবধানে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে পেলেন আরেকটি সেঞ্চুরি।
শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মুমিনুল সর্বোচ্চ তিনটি করে সেঞ্চুরি করেছেন। এছাড়া নিউজিল্যান্ড ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মুমিনুলের সেঞ্চুরি দুটি করে।