সম্ভাবনাময় ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন শাহরিয়ার নাফীস। ২০০৬ সালে আইসিসির ইমার্জিং খেলোয়াড় তালিকাতেও তার নাম ছিলো। কিন্তু এমন সম্ভাবনাময় খেলোয়াড় হয়েও ক্যারিয়ারটা খুব বেশি লম্বা হয়নি নানা কারনে। গত কয়েক বছর ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি ধারাভাষ্যকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন নাফীস। শনিবার দুপুরে হোম অব ক্রিকেটে বিদায় বেলায় নাফীস জানালেন কোন অতৃপ্তি নিয়ে ক্রিকেটকে তিনি বিদায় জানাচ্ছেন না।
সাবেক হওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে নাফীস বলেছেন, ‘একটু কঠিন ফিলিংস। গতকাল (শুক্রবার) থেকেই চিন্তাভাবনা কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছিল। আমি খেলব না এটা তাতে খুব কষ্ট লাগছে না, তবে অনুভূতিটা কেমন যেন অদ্ভুত। স্কুল ছেড়ে যাওয়ার সময় যেমন অনুভূতি হয়, অনেকটা তেমন অনুভূতি। আমি সবসময় সব সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নিয়েছি। আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই সঠিক সময়। আমাদের চেয়েও বড় অনেক ক্রিকেটারের এই সৌভাগ্য হয়নি। বিসিবি ও কোয়াবকে ধন্যবাদ এরকম একটা আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ।’
নাফীস আরও যোগ করে বলেছেন, ‘অহংকার করে বলছি না, আমি ধর্মপ্রাণ একজন মুসলমান। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি আমার সেরা যেটা ছিল আল্লাহ তাই দিয়েছেন। তাই আমার কোনো অতৃপ্তি নেই।’ব্যাট-প্যাড গুছিয়ে রাখলেও ক্রিকেট অফিসের দায়িত্বে দেখা যাবে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানকে। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাবে রাজ্জাককে, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে যুক্ত হতে চলেছি ইনশাআল্লাহ। যোগ দেওয়ার পর কাজের পরিধি, কতটুকু করতে পারব বা পারব না সেটা তখন বুঝব। এখন এ ব্যাপারে মন্তব্য করার সঠিক সময় নয়।’
৭৫ টি ওয়ানডে, ২৪টি টেস্ট ও ১টি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন শাহরিয়ার নাফিস। তিন ফরম্যাটে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে মোট ৩ হাজার ৪৯৩ রান। নিজের ক্যারিয়ার বিশ্লেষণ করতে গিয়ে নাফীস বলেছেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া বাংলাদেশ মানুষের ভালোবাসা। আমি যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আরও একটু বেশি খেলতাম, হয়ত পরিসংখ্যান আরও ভালো হত। কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়ে তৃপ্তি বিচার করি না। বাংলাদেশ মানুষ ও মিডিয়ার যে ভালোবাসা পেয়েছি এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা পাওয়া একজন খেলোয়াড়ের জন্য সম্ভব না। আমার ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো অতৃপ্তি নেই।’
বিদায়ের দিনে পরিবারের অবদানও স্মরণ করলেন নাফীস, ‘আমার যখন বয়স ১০, আমি ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি এবং আমার আব্বা-আম্মা আমাকে সাপোর্ট করেছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে সবচেয়ে বড় অবদান আমার স্ত্রীর। কারণ আমি খুব অল্প বয়সে বিয়ে করে ফেলি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর সাথে সাথে বিয়ে করেছিলাম। এরপর অনেক উত্থানপতন ছিল। খেলোয়াড়দের সফলতা অনেকে দেখে, ব্যর্থতা দেখে না। কিন্তু পরিবারের কষ্টটা কেউ দেখে না। কত কষ্ট করতে হয়, কত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। বিশটা বছর খেলেছি, এই বিশ বছরে একবারও টানা বিশদিন বাসায় সময় দিতে পারিনি। পরিবারের অবদানেই এতদূর আসা সম্ভব।’