৪০৮ দিন পর মাঠে ফিরেই জয়ের স্বাদ পেলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। মঙ্গলবার তামিমের বরিশালের বিপক্ষে ৪ উইকেটে অবিশ্বাস্য এক জয় পেলো মাহমুদউল্লাহর খুলনা। ১৫৩ রানের জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নেমে আরিফুলের দৃঢ়তায় ম্যাচ জেতে মাহমুদউল্লাহর খুলনা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ২২ রান। আগের তিন ওভারে দূর্দান্ত বোলিং করা মিরাজ শেষ ওভারে দিলেন ২৪! এতেই ১ বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতে যায় খুলনা। এই জয়ে সাকিবের প্রত্যবর্তন ম্যাচটি জয়ে রাঙ্গালো জেমকন খুলনা।
সাকিব-মাহমুদউল্লাহ-ইমরুল-এনামুল-শফিউল-আল আমিনদের নিয়ে কাগজে-কলমে অভিজ্ঞ দলই গড়েছিল খুলনা। মাঠের লড়াইয়েও দেখা গেলো তার ছাপ। যদিও আজকের ম্যাচে খুলনার টপ অর্ডারে অনেকটাই ব্যর্থ ছিল। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৫৩ রান মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে খুলনা। বরিশালের পেসার তাসকিনের গতির সামনে দাঁড়াতেই পারেননি খুলনার দুই ওপেনার এনামুল হক (৪) ও ইমরুল কায়েস (০)। প্রথম ওভারে ফিরে যান তারা দুইজন।
তৃতীয় উইকেটে দীর্ঘদিন পর মাঠে ফেরা সাকিবকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন খুলনার অধিনায়ক। যদিও মাত্র ২৮ রানের জুটি গড়ে সাজঘরে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। অফস্পিনার মেহেদী হাসানের বলে লংঅনে ক্যাচ দিয়ে ইমনের তালুবন্দি হন মাহমুদউল্লাহ। সঙ্গী হারানোর ৪ বল পরই ফিরে যান সাকিব। বল হাতে এক উইকেট নেওয়ার সাকিব ব্যাট হাতে খেলেছেন ১৫ রানের ইনিংস। ১৩ বলে ২ চারে সাকিব সাজিয়েছেন তার প্রত্যবর্তন ম্যাচের ইনিংসটি।দুই অভিজ্ঞ ওপেনারকে হারিয়ে বড় বিপদে পড়ে খুলনা। কিন্তু অভিজ্ঞ জহুরুল ও আরিফুল মিলে ইনিংস মেরামত করার চেষ্টা করেন। তাতে সফল জহুরুল-আরিফুল জুটি। যদিও জহুরুল ২৬ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩১ রানের ইনিংস খেলে আউট হন। অন্যদিকে শুরুতে স্লো ব্যাটিং করা আরিফুল শেষ ওভারে দেখিয়েছেন ম্যাজিক।
ইনিংসের শেষ ওভারে খুলনার প্রয়োজন ছিল ২২ রানের। বোলিং প্রান্তে আগের তিন ওভারে ১২ রান দিয়ে দারুন বোলিং করা মিরাজ। পুরো ইনিংস জুড়ে স্লো ব্যাটিং করা আরিফুল যেন মিরাজের অপেক্ষাতেই ছিলেন। প্রথম বলেই লংঅন দিয়ে ছক্কা হাকালেন। এতেই বোধহয় ঘাবড়ে গেলেন মিরাজ। পরের বলে একই শটে আবারো বড় ছক্কা। তৃতীয় বলটি সিঙ্গেল নেওয়ার সুযোগ থাকলেও নেননি আত্মবিশ্বাসী আরিফুল। পরের দুই বলে আবারো মিড উইকেট দিয়ে দুই ছক্কায় এক বল হাতে রেখেই জয় তুলে মাঠ ছাড়েন আরিফুল। অথচ ম্যাচটি হারলে স্লো খেলার কারনে খল নায়ক হতে পারতেন তিনি। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী আরিফুল ৩৪ বলে ২ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৮ রানের ইনিংস খেলে হয়ে খেলেন বরিশাল বধের নায়ক।
আরিফুলকে যোগ্য সঙ্গ দেন যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের অলরাউন্ডার শামীম হোসেন। ১৮ বলে ১ চার ও ১ ছক্কায় শামিম খেলেন ২৬ রানের ইনিংস। খুলনার জয়ের পেছনে এক ছক্কায় শহিদুলের ৮ রানের ইনিংসের গুরুত্বও কম নয়।বরিশালের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল বোলার সুমন খান। ২১ রান খরচায় দুই উইকেট নিয়েছেন তিনি। তাসকিন ৩৩ রানে দুটি এবং মেহেদী মিরাজ ও কামরুল ইসলাম একটি করে উইকেট নেন।এর আগে টসে হেরে ব্যাটিং করা বরিশাল নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৫২ রান সংগ্রহ করে। দলের স্কোর সমৃদ্ধ করতে সবচেয়ে বড় অবদান পারভেজ ইমনের। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫১ রানের ইনিংস আসে বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে। ৪২ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় পারভেজ নিজের ইনিংসটি সাজিয়েছেন। যদিও খুলনার মতো বরিশালের শুরুটা ভালো হয়নি। বরিশালের অধিনায়ক মেহেদীকে ওপেনিং পাঠিয়ে বাজি ধরেছিলেন। সেই বাজিতে অবশ্য জিততে পারেননি তামিম। রানে খাতা না খুলেই মেহেদী ফিরে যান সাজঘরে। অধিনায়ক তামিমও ভালো খেলতে পারেননি। আউট হয়েছেন ১৫ বলে ১৫ রান করে।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর চতুর্থ উইকেটে যুব বিশ্বকাপজয়ী দলের দুই সতীর্থ পারভেজ ও তৌহিদ মিলে ছোট, কিন্তু কার্যকরী ৩২ রানের জুটি গড়েন। তাতে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিলেও স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ হয়নি। তৌহিদ হৃদয় ২৫ বলে ২৭ রানের ইনিংস খেলেন। এছাড়া মাহিদুল ইসলাম ২১ ও তাসিকনের অপরাজিত ১২ রানের ঝড়ো ইনিংসে বরিশাল স্কোরবোর্ডে ১৫২ রান সংগ্রহ করে।খুলনার বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল বোলার শহিদুল। ১৭ রান খরচায় ৪ উইকেট শিকার করেছেন এই পেসার। এছাড়া শফিউল ২৭ রানে দুটি, হাসান মাহমুদ ৪৫ রানে দুটি উইকেট নিয়েছেন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব ১৮ রান খরচায় তুল নিয়েছেন একটি উইকেট।