ব্যাটিংয়ে নামলেই যেন ফিফটি। বলা হচ্ছে আফগানিস্তান ‘এ’ দল-এর সেদিকুল্লাহ আতালের কথা। ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপে ৫ ম্যাচের ৫টিতেই করেছেন ফিফটি। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী কখন কীভাবে ব্যাটিং করতে হয়, সেটাও তিনি শিখিয়েছেন।
এবারের ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬ ম্যাচ খেলেছিলেন সেদিকুল্লাহ। আফগানিস্তানের জার্সিতে সেই ৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বলার মতো কিছুই করতে পারেননি তিনি। ৮৩.৭২ স্ট্রাইকরেটে করেন ৭২ রান। সেই সেদিকুল্লাহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার মঞ্চ হিসেবে বেছে নিলেন ইমার্জিং এশিয়া কাপকেই। আফগানিস্তান ‘এ’ দলের হয়ে ১৪৭.৭৯ স্ট্রাইকরেটে সিরিজ সর্বোচ্চ ৩৬৮ রান করেছেন। গড়টাও চোখ কপালে ওঠার মতো: ১২২.৬৬! জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দলে। যেখানে এই সেদিকুল্লাহর কাছেই বাংলাদেশ ‘এ’ দল নাস্তানাবুদ হয়েছিল সদ্য সমাপ্ত উদীয়মানদের এই এশিয়া কাপে।
আফগানিস্তান ‘এ’ দলের জার্সিতে ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপ জুড়ে বিস্ফোরক ব্যাটিং করে গেছেন সেদিকুল্লাহ। ফাইনালের আগে টুর্নামেন্টে নিজের সর্বনিম্ন ১২৬.৮২ স্ট্রাইকরেটে ব্যাটিং করেছেন গ্রুপ পর্বে হংকংয়ের বিপক্ষে। সেমিফাইনালে ভারত ‘এ’ দলকে আফগানিস্তান ‘এ’ দল যে ২০ রানে হারিয়েছে, সেখানে তিনি ৫২ বলে ৮৩ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলেন। মারকুটে এই আফগান বাঁহাতি ব্যাটার গতকাল ওমানের আল আমেরাত গ্রাউন্ডে ফাইনালে ব্যাটিং করেন ১০০ স্ট্রাইকরেটে (৫৫ বলে ৫৫ রান)। ওপেনিংয়ে নেমে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকেছেন। শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের দেওয়া ১২০ বলে ১৩৪ রানের লক্ষ্য আফগানরা তাড়া করে জিতেছে ১১ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটে। প্রথমবারের মতো আফগানরা জিতেছে ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপ।
ওমানের আল আমেরাত গ্রাউন্ডটা শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের জন্য ছিল প্রতিশোধের মিশন। চ্যাম্পিয়ন হয়ে গ্রুপ পর্বে হারের প্রতিশোধ আর কি-ইবা হতে পারত! শিরোপা রক্ষার লড়াইয়ে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ১৫ রানেই ৪ উইকেট হারায় লঙ্কানরা। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৩৩ রানে আটকে যায় শ্রীলঙ্কা। সেই লক্ষ্য যে মামুলি সেটা তো প্রমাণিত হয়েছেই আফগানিস্তান ‘এ’ দলের ব্যাটিংয়ে। ফাইনালসেরা হয়েছেন গজনফার। ৪ ওভারে ১৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে নজরকাড়া সেদিকুল্লাহই হয়েছেন সিরিজসেরা।
১২ বলে ৪ রান, হাতে ৭ উইকেট-এমন সমীকরণের সামনে যখন আফগানিস্তান ‘এ’ দল, তখন টিভি সেটের সামনে বসে রশিদ খেলা দেখছিলেন জাতীয় দলের বহর নিয়ে। ঈশান মালিঙ্গার বল ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে মোহাম্মদ ইশাক চার মারতেই আল আমেরাত গ্রাউন্ডে আফগানিস্তানের উল্লাস শুরু। সেটার ঢেউ ছড়িয়ে পড়েছে হাশমাতুল্লাহ শাহিদী, ফজলহক ফারুকি, রশিদদের মধ্যে। শিষ্যদের উদযাপনের পাশাপাশি জাতীয় দলের কোচ জোনাথন ট্রটের মুখে দেখা গেছে চওড়া হাসি। এমন ঐতিহাসিক জয়ের মুহূর্ত ভিডিও করে রশিদ দেখিয়েছেন কার কী প্রতিক্রিয়া।
৩৩ সেকেন্ডের যে ভিডিও রশিদ করেছেন, সেটা নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দিয়েছেন। থাম্বনেইলে লিখেছেন, ‘ইয়েস অভিনন্দন আফগানিস্তান।’ ইয়েস-এর শেষে একটা ‘এস’-এর পরিবর্তে একগাদা এস দিয়েছেন। বোঝাই যাচ্ছে আফগান তারকা অলরাউন্ডার কতটা উচ্ছ্বসিত। আফগানিস্তানের পতাকার ইমোজিও একাধারে জুড়ে দিয়েছেন তিনি। সেই ভিডিওর ক্যাপশনে রশিদ লিখেছেন, ‘অভিনন্দন আফগানিস্তান।
আফগানিস্তান জিন্দাবাদ।’ অন্যদিকে নবী খেলা দেখছিলেন সমুদ্রের পাড়ে বসে। সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আফগানিস্তান ‘এ’ দলের ইতিহাস গড়ার আনন্দের ঢেউও দোলা দিয়েছে নবীকে। আফগান তারকা নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘অসাধারণ!তরুণ-তরুণীদের মহান বিজয়ে সবাইকে অভিনন্দন। ধন্যবাদ তরুণরা।’