বিতর্ক আর সাকিব আল হাসান, যেন একে ওপরের পরিপূরক। পুরো ক্যারিয়ার জুড়েই নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন সাকিব। সম্প্রতিও তার কিছু বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক চলছে সর্বত্র। আজ ২৪ মার্চ সাকিবের ৩৩ তম জন্মদিন। বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারের জন্মদিন ভক্ত, সতীর্থ থেকে শুরু করে সর্বসস্তরের মানুষে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আইপিএলে সাকিবের দল কলকাতা রাইডার্সও বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডারের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
নিজেদের ফেসবুক পেজে কেকেআর সাকিবকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে লিখেছেন, ‘ আমাদের প্রিয় সাকিব আল হাসানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। শুভ জন্মদিন। আপনি সব সময় আমাদের কাছে সুপারস্টার হিসেবে থাকবেন।’ইএসপিএনক্রিকইনফো কিছু পরিসংখ্যান দিয়ে সাকিবের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, ‘সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার প্লাস রান এবং ৫০০ প্লাস উইকেট শিকারী তিনজন খেলোয়াড়ের একজন। একজন অলরাউন্ডার সুপারস্টার, বাংলাদেশের সাকিব আল হাসানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।’ইমরুল কায়েস নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘একজন সেরা ক্রিকেটার, সতীর্থ, বন্ধু এবং বাংলাদেশ ক্রিকেটের আদর্শ সাকিব আল হাসান। জন্মদিনের শুভেচ্ছা।’
অফিস্পিনার নাঈম হাসান জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, ‘শুভ জন্মদিন সাকিব ভাই। আপনার সমৃদ্ধ জীবন কামনা করছি এবং আপনার সাথে আরও ম্যাচ খেলার আশা করছি।’আরেক তরুণ অলরাউন্ডার আফিফ হোসেনও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সাকিবকে, শুভ জন্মদিন ভাই।’অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, ‘যে মানুষটি লক্ষ লক্ষ স্বপ্নকে অনুপ্রাণিত করেছিল তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। শুভকামনা, সাকিব ভাই।’নারী দলের পেসার জাহানারা আলাম জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে লিখেছেন, ‘আমাদের কিংবদন্তি সাকিব আল হাসান ভাইকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আল্লাহ আপনাকে সুস্বাস্থ্য এবং আরও অনেক সাফল্য দান করুন।’যুব বিশ্বকাপজীয় দলের পেসার শরিফুল ইসলামও সাকিবের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এভাবে, ‘শুভ জন্মদিন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সাকিব ভাই।’
কথা সাহিত্যিক আনিসুল হকও সাকিবের সঙ্গে নিজের একটি ছবি পোস্ট করে সাকিবকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।মাগুরার ফায়সালের জাতীয় দলে যাত্রা শুরু হয় ২০০৬ সালে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে একদিনের ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জার্সি গায়ে মাঠে নামেন সাকিব আল হাসান। তখন হয়তো কেউই ভাবেইনি সেই সাকিব একদিন বিশ্বজয় করবেন। ওই যে শুরু। সাকিব ছুটেছেন নিজস্ব গতিতে। তার নেতৃত্বে দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সিরিজ জিতে টাইগাররা। দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ। ওয়ানডে, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি-- তিন ফরম্যাটেই বিশ্বসেরা ক্রিকেটার হন বাংলাদেশের পোস্টার বয়।সারা বিশ্বের প্রায় সব ফ্রাঞ্চাইজি লিগ খেলা একমাত্র বাংলাদেশী। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) পাশাপাশি ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল), পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (সিপিএল), কাউন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, বিগ ব্যাশ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। যেখানেই খেলেছেন বাংলাদেশকে পরিচিত করে এসেছেন নতুনভাবে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সামনে থেকে নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে মোহাম্মদ আশরাফুল নেতৃত্ব হারালে অধিনায়কের দায়িত্ব পান বর্তমান অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ওই সময়ে সহ-অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পান সাকিব আল হাসান। কিন্তু ওই বছরে মাশরাফি ইনজুরিতে পড়লে অধিনায়কের দায়িত্ব চলে আসে সাকিবের উপর। কিন্তু শুরুটা ভালো হলেও, দিনে দিনে সাকিব ক্রিকেটীয় পারফরম্যান্স থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন। একই সঙ্গে নিজের অধিনায়কত্ব নিয়েও সন্তুষ্ট ছিলেন না সাকিব। তাই ২০১১ সালে ঘোষণা দিয়েই নেতৃত্ব ছাড়েন তিনি। তবে ফর্মে ফিরে আসতে খুব বেশি সময় নেননি সাকিব। দেশের হয়ে রেকর্ডবুকের কোন পাতায় নেই সাকিব তা খুঁজে পাওয়াই যেন দুষ্কর। বেস্ট বোলিং ফিগার, সর্বোচ্চ রান, সর্বোচ্চ উইকেট- সব বিভাগেই প্রথম তিন জনের একজন সাকিব।
অনেক সাফল্যের পরও কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য হয়েছিলেন সমালোচিত। ক্রিকেটে মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে সেই সব বিতর্কিত বিষয় নিয়ে হয়েছে অনেক আলোচনা। যার কারণে একবার নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বাংলাদেশের বড় এই তারকা। ২০১৪ সালে সবধরণের ক্রিকেট থেকে থেকে ছয় মাসের জন্য নির্বাসিত করা হয় সাকিবকে। নিষেধাজ্ঞার কারণ ছিলো আচরণগত সমস্যা। এরপর স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করে এক বছর নিষিদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। গত সপ্তাহে বোর্ডের বিপক্ষে কথা বলে আবারো সমালোচনার শিকার হন। ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর সাকিব আল হাসান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী উম্মে আহমেদ শিশিরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে তিনি দুইটি কন্যা সন্তান এবং একটি পুত্র সন্তানের জনক। তার বড় মেয়ের নাম আলাইনা হাসান অব্রি এবং ছোট মেয়ের নাম ইররাম। চলতি মাসের ১৬ মার্চ তৃতীয় সন্তানের বাবা হন সাকিব।