ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই ক্রিকেটীয় ব্যকরণ মেনে ব্যাটিং করেন না স্টিভেন স্মিথ। তাঁর ব্যাটিং স্ট্যান্স, ব্যাট গ্রিপিং, ব্যাট লিফটিং সবকিছুই একটু আলাদা। তবুও টেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তিনি। অথচ ব্যাগি গ্রিণের অপেক্ষায় থাকা উইল পুকোভস্কির নাকি কিশোর বয়সে স্মিথের ব্যাটিংয়ের ধরণ দেখে বেশ হাস্যকর মনে হত!
অস্ট্রেলিয়ার বোলিং কিংবদন্তী শেন ওয়ার্নের উত্তরসূরী হিসেবে অভিষেক স্মিথের। ছিলেন মূলত স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার। ডানহাতে লেগ স্পিন করতেন সঙ্গে মিডল অর্ডারে টুকটাক ব্যাটিংও করতেন। অথচ সেই স্মিথই কিনা ধীরে ধীরে অস্ট্রেলিয়ার তো বটেই টেস্টে ক্রিকেটে বিশ্বের এক নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে নিজেকে পরিণত করেছেন।
২০১০-১১ সালে অ্যাসেজ সিরিজে স্মিথের অভিষেক ম্যাচটি মাঠে বসে দেখার সুযোগ হয়েছিল পুকোভস্কির। অস্ট্রেলিয়ান দলে এমন একজন ব্যাটসম্যানকে দেখে তাঁর ১২ বছরের কিশোর মন হেসে উঠেছিলো। বয়সভিত্তিক দলের কোচদের দীক্ষার সঙ্গে স্মিথের ব্যাটিংয়ের যে কোন মিলই নেই। এমনকি অস্ট্রেলিয়া দলে স্মিথের সুযোগ পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন জেগেছিল তাঁর।
সম্প্রতি এক আলাপচারিতায় পুকোভস্কি বলেন, 'যে কথাটি আগে কখনো কাউকেই বলিনি সেটিই বলতে যাচ্ছি। বক্সিং ডে টেস্টে ৬ কিংবা ৭ এ প্রথমবার যখন তাকে (স্মিথ) ব্যাটিং করতে দেখি। তখন ভেবেছিলাম সে মাঠে কি করছে? এমন একজন হাস্যকর ব্যাটসম্যান অস্ট্রেলিয়া দলে কীভাবে খেলছে? রীতিমত হাস্যকর ব্যাটিং করছে সে। তখন সবে মাত্র ১২ বছর বয়স আমার। আর আমাদের কোচরা যেভাবে শেখাতেন সে তেমন ভাবে ব্যাট করতো না। খুব অদ্ভুত ভঙ্গিতে ব্যাটিং করেছিল সে।'
সময়ের সঙ্গে আরো পরিণত স্মিথকে দেখে অন্য সবার মতই বিমোহিত পুকোভস্কি। অপ্রথাগত ব্যাটিং করেও শক্তিশালী মানসিকতাকে স্মিথের সাফল্যের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন তিনি। স্মিথের ঘড়ির কাঁটার মত নড়াচাড়া করা দেখে কিশোর বয়সে হাসি পেলেও বর্তমানে এই ডান হাতি ব্যাটসম্যানকেই নিজের আদর্শ মানেন ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।
এ প্রসঙ্গে পুকোভস্কি বলেন, 'আমি এখন তার ব্যাটিং দেখে অবাক হই। মানসিকভাবে সে খুবই শক্তিশালী। আর এটিই তাকে এতটা সফল বানিয়েছে। কিশোর বয়সে তার ব্যাটিং হাস্যকর লেগেছিলো কিন্তু এখন সেটিই আমাকে বিমোহিত করে। সে দুর্দান্ত একজন ব্যাটসম্যান। সে অনেকের মতো আমার জন্যও অনুসরণীয়।'
অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য সেবারের অ্যাসেজ ভুলে যাওয়ার মতই কেটেছিলো। স্বাগতিক হয়েও ৩-১ ব্যবধানে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে গিয়েছিলো তাঁরা। এর মাঝে বক্সিং ডে টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ৯৮ রানে অল আউট হওয়ার লজ্জাতেও পরতে হয়েছিল তাদের। সেই সিরিজের ৩ ম্যাচেই সুযোগ পেয়েছিলেন স্মিথ।
৬ ও ৭ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে দুটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছিলেন তিনি। তবুও দল থেকে দুই বছরের জন্য বাদ পড়ে যান। এরপর টানা দুই মৌসুম শেফিল্ড শিল্ডে ভালো ব্যাটিংয়ের পুরষ্কার স্বরূপ ২০১৩ সালে আবারো ভারত সফরের দলে ডাক পান। সে সিরিজেই তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি স্মিথকে।