My Sports App Download
500 MB Free on Subscription


আমিনুল-দূর্জয়দের স্মৃতিচারণ

২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম সেজেছিল বর্ণিল সাজে সজ্জিত। গ্যালারিভর্তি দর্শকদের করোতালির মধ্য দিয়ে শুভ্র-সফেদ জার্সির ওপর ব্লেজার চাপিয়ে সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে টস করতে নামেন নাইমুর রহমান দুর্জয়। মঙ্গলবার বাংলাদেশের টেস্ট যুগের দুই দশক পূর্ণ হয়েছে। দুই দশক পূর্তির দিনে স্মৃতির ভেলায় চরে ২০ বছর আগে ফিরে গেলেন আমিনুল, দূর্জয়-আকরামরা।

অভিষেক টেস্টের অধিনায়ক ছিলেন নাঈমুর রহমান দূর্জয়। প্রথম টেস্টে বল হাতে দূর্দান্ত পারফরম্যান্স ছিল নাঈমুর রহমানের। প্রথম ইনিংসে ১৩২ রানের বিনিময়ে ৬ উইকেট নিয়ে শুরুটা করেছিলেন অসাধারণ। ওই ম্যাচের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দূর্জয় বলেছেন, ‘আসলে ওই সময়টা একেবারেই নতুন ছিল। সবাই খুব বেশি আবেগপ্রবণ ছিল। আমাদের কাছে সবগুলো মুহূর্তই তখন ছিল অপরিচিত। কাজেই আমরা যারা সেই ম্যাচে খেলেছি কোনো একটি মুহুর্তেকে আলাদা করা কঠিন। আমাদের কাছে প্রতিটি মুহুর্তেই অসাধারণ ছিল। সবচেয়ে বড় কথা আমার ক্যারিয়ারে আমি টেস্ট খেলার সুযোগ পাব, এটা আসলে চিন্তাও করিনি।’

অভিষেক টেস্টে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেওয়া নাঈমুর রহমান কখনো কল্পনাও করেননি তিনি দেশকে নেতৃত্ব দেবেন, ‘ টেস্টের অধিনায়ক হবো, হতে পারি-এমন কিছু আমি কখনোই ভাবিনি। তবে আমার চারপাশের মানুষদের কাছ থেকে এমন ভাবনার কথা শুনতাম। আমাকে বলতো, ভবিষ্যৎ অধিনায়ক। এই চিন্তাটা নিজের থেকে কখনো করিনি। অভিষেক টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়াকে ক্যারিয়ারের বিশেষ প্রাপ্তি মনে করি।’

বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। বর্তমানে আইসিসিতে চাকরি করছেন। বাংলাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে মাইনর কাউন্টি খেলেছেন তিনি। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টও রাঙ্গিয়েছেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ১৪৫ রানের একটি অসাধারণ ইনিংস খেলেন। অভিষেক টেস্টের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বুলবুল জানালেন, ‘ওই ম্যাচটির প্রতিটি ঘটনায়ই অসাধারণ। প্রতি ক্ষণে ক্ষনেই আমি শিহরিত হচ্ছিলাম। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে ব্যাটিং করছি, প্রতিটি বলেই আমার মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিল। আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম অনুভূতির জায়গা জুড়ে আছে অভিষেক টেস্ট।’

বিগ ম্যান খ্যাত আকরাম খানের অনুভূতিও অসাধারণ। অভিষেক টেস্টের দুই ইনিংসে ৩৫ ও ২ রান করা আকরাম বললেন, ‘অনেক ভালো অনুভূতি, অভিষেক টেস্টের একজন সদস্য হতে পেরেছি। ক্রিকেটের যতগুলো ভালো অর্জন আছে, সবখানেই কোন না কোন ভাবে আমি আছি। এটি আমার জন্য দারুন প্রাপ্তির বিষয়। ওই টেস্টর আগের রাতে আমাদের সবার মধ্যে রোমাঞ্চ কাজ করছিল। এতোই রোমাঞ্চিত ছিলাম আমরা, কেউই ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি।’

অভিষেক টেস্টে ৩ উইকেট শিকারের পাশাপাশি ২৬ রান করা রফিক নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে রফিক বলেছেন, ‘বড় স্বপ্ন নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। পারিনি অভিজ্ঞতার কারনে। তারপরও আমরা কিন্তু ভারতকে কঠিন সময় দিয়েছিলাম। আমাদের আসলে প্রতিটি মুহুর্তই রোমাঞ্চের মধ্য দিয়ে কেটেছে।’অভিষেক টেস্টের উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট। অভিষেক টেস্টের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘ম্যাচের আগের রাতে অনেক বেশি রোমাঞ্চিত ছিলাম। পাশাপাশি খুব টেনশনেও ছিলাম। কি হবে, কিভাবে খেলবো। কোন অভিজ্ঞতাইতো আমার ছিল না। ম্যাচের আগের রাত আমাদের কারোই ঠিকমতো ঘুম হয়নি। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ, সব মিলিয়ে বাড়তি একটা চাপ সময়ই কাজ করতো। টেস্টের প্রথম দিনের পর আমি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পেরেছিলাম।’

বিকাশ রঞ্জন দাস এখন মাহমুদুল হাসান। হাসিবুল হাসান শান্তর সঙ্গে অপরপ্রান্ত থেকে বোলিংয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অভিষেক টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা তাকে অন্যরকম অনুভূতি দেয়, ‘প্রথম টেস্ট খেলেছি ২০ বছর হয়ে যাচ্ছে। এই ২০ বছরে অনেক কিছু প্রাপ্তি আছে। কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মনে হয় আমার আসল প্রাপ্তি অভিষেক টেস্ট খেলা। প্রথম টেস্ট দলের মধ্যে আমি সবচেয়ে জুনিয়র ছিলাম। এতো কিছু বুঝতাম না। আসলে বিশেষ কোন ফিলিংসই ছিল না।’ 

শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুতের সঙ্গে ওপেনিং করেন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিয়ান মেহরাব হোসেন অপি। অভিষেক টেস্ট খেলার অনিভুতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘টেস্ট খেলার স্বপ্নতো সবার থাকে, অনেকেরই সেটা পূরণ হয় না। অথচ আমার হয়েছে। বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের একজন সদস্য হিসেবে এটি আমার জন্য বিশাল প্রাপ্তি। আমি গর্বিত প্রথম টেস্টের একজন সদস্য হিসেবে থাকতে পেরে। এই ফরম্যাট খেলতে পেরেছি বলে নিজেকে পরিপূর্ণ একজন ক্রিকেটার মনে হয়। টেস্টের আগের রাতে খুব অস্থির ছিলাম, ভারতের মতো একটি দলের বিপক্ষে টেস্ট। শিহরণের পাশাপাশি ভয়ও কাজ করছিল।’

বাংলাদেশের হয়ে লাল বলে প্রথমবারের মতো বোলিং করেন হাসিবুল হোসেন শান্ত। ২০ বছর আগের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘স্মৃতি বলতে, প্রথম টেস্টে সুযোগ পেয়েছি সেটাইতো অনেক বড় ব্যাপার। অনেক রোমাঞ্চিত ছিলাম। বাংলাদেশের হয়ে প্রথম বোলিং করবো সেটি ভেবেইতো শিহরিত ছিলাম। ভয়ও কাজ করছিল। সত্যি কথা বলতে আমাদেরতো টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা ছিল না। আমরা এতো কিছু বুঝতামও না।’